পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী মা পূজায় বসিয়াছিলেন, তাড়াতাড়ি একটা প্ৰণাম সারিয়া উঠিয়া আসিলেন। বলিলেন, “কি বৌমা, কি ? কি রকম বোধ করছি ?” কি রকম যে বোধ করিতেছে। সুলতা নিজেই তাহা বোঝে না, শাশুড়ীকে বলিবে কি। দেহের প্রত্যেকটি অণু যেন আপনাকে কেন্দ্ৰ করিয়া পাক খাইতে আরম্ভ করিয়াছে, মাথাটা এমন ভারি যে মাটিতে না নামাইলে খসিয়াই পড়িবে বোধ হয়, অজস্র এলেমেলো চিন্তা জড়াজড়ি করিয়া মনের মধ্যে আসা যাওয়া শুরু করিয়াছে ! সে করুণস্বরে বলিল, “কেমন যেন লাগছে মা, অস্থির অস্থির করছে। মা চিন্তিত মুখে বলিলেন, “কি জানি, এখনো কিছু বলা যায় না। \ ঘরে গিয়ে তুমি বরং শুয়েই থাক বৌমা, খেয়ে আর কােজ নেই। ব্যথা ট্যথা টের পাওয়া মাত্র আমায় কিন্তু জানিয়ো বাছা, দাই ডাকতে হবে, বিকুর কাছে খবর পাঠাতে হবে-” সুলতার ইচ্ছা হইল বলে, দাই ডাকিতে লোক যাক, বিকাশের কাছে লোক ছুটুক, যত কিছু আয়োজন দরকার সব সমাপ্ত হইয়া থাক। ডাক্তার ডাকার কথাটা তো শাশুড়ী কই উল্লেখ করিলেন না ? শুধু দাই এর উপর ইহারা নির্ভর করিয়া থাকিবে নাকি ? বিকাশ বলিয়াছে দরকার হোক বা না হোক ( ভগবান করেন যেন দরকার না হয়) প্ৰথম হইতে একজন ডাক্তার আনিয়া বসাইয়া রাখিবে । কিন্তু সে খবর পাইয়া আপিস হইতে আসিবার পূর্বেই যদি ভয়ানক কিছু ঘটিয়া যায় ? সে যদি অজ্ঞান হইয়া পড়ে ? যদি মরিয়া যায় ? মৃন্ময়ী তীব্র দৃষ্টিতে সুলতার মুখের ভাব পরিবর্তন দেখিতেছিল, ঠোঁট ভাঙ্গিয়া হাসিয়া বলিল, “বৌ-এর মুখ দেখেছি মা ? যেন ফাসি যাচ্ছে । সারাজন্ম ছেলে বিইয়ে কাটবে, মেয়ে মানুষের এতে এত ভয় কিসের শুনি ?” মা বলিলেন, “আহা, তুই চুপ কর মিলু।” মুন্ময়ী উদ্ধত ভাবে বলিল, “কোন চুপ করব ? হক কথা বলব তার আর চুপ করা করি কি !” সুলতা ছল ছল চোখে চাহিয়া রহিল। মা বলিলেন, “যাও বৌমা, তুমি শুয়ে থাকগে। ভাত তো মুখেও করলে না, একটু গরম দুধ খাবে ? সুলতা মাথা নাড়িল । মৃন্ময়ী বলিল, “খোকা যখন হয়, আমার শাশুড়ী আমায় একবাটি দুধ গিলিয়েছিল মা। শেষে মারি আর কি বমি করে!' © brb”