পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

शैका পরদিন যায় দিল্লী বোম্বায়ের মত সাত সমুদ্র তের নদীর পারে আরও যে সব জায়গা আছে, যার নামও সে কোনদিন শোনে নাই ? কদিন পরে তাই গেল সুভদ্রা, তবে দিল্লী বা বোম্বাইয়ে নয়, সাত সমুদ্র তের নদীর পারে অন্য কোন জায়গাতেও নয়। সুভদ্রার অত পয়সা কই p ওস্তাদ। গরীব মানুষ। তাই ক'দিন এখানে ওখানে ভাসিয়া বেড়াইয়া দু’জনে কলকাতা আসিয়া ঠেকিয় গেল। তবে ওস্তাদ ভরসা দিয়া বলিল, তাতে কি আসে যায় ? যেখানে খুশী যাওয়ার সাধ মনে থাকে, যাওয়ার ব্যবস্থা করিতে যেখানে খুশী যত। দিন খুশী দিন কাটিয়া যাক, একদিন তো তারা যাইবেই যাইবে। তার বেশী আর কি চাই মানুষের ? যাওয়ার চেয়ে যাওয়ার আয়োজন তো তুচ্ছ নয়, মনটাই তো যায় মানুষের মাটির পৃথিবীর বুকে এখান হইতে ওখানে ! নাই যদি যাওয়া হয়। এখানকার ঘরবাড়ী লোকজন দেখার বদলে ওখানকার ঘরবাড়ী যানবাহন দেখিতে, এখানকার বালি পাথর সবুজ ঘাসে হাঁটার বদলে ওখানকার বালি পাখির সবুজ ঘাসে হাঁটতে, একটা যাত্রা তো একদিন তাদের শুরু করিতেই হইবে, অজানা অচেনা দেশের উদ্দেশ্যে সব যাত্রার চরম একটা যাত্ৰা ? তা বটে। সজোরে ওস্তাদকে জড়াইয়া ধরিয়া সুভদ্র বলে, “তবে তাই চলে। ওস্তাদ, সেখানেই আমরা যাই। তুমি আমার গলাটা টিপে ধরো, আমি তোমার গলাটা টিপে ধরি।” f ওস্তাদ কি বলিতে যায়, বা হাতটি আলগা করিয়া সুভদ্ৰা “তার মুখে চাপা। দেয়। দেহের ভারে মুসাফিরখানার ছেড়া নোংরা মাদুরের বিছানায় তাকে চি করিয়া ফেলিয়া তার বুকের উপর লম্বা হইয়া শুইয়া পড়ে। নরম কোমল হাতটি মুখ হইতে সরাইয়া স্ফৰ্ত্তির সঙ্গে ওস্তাদ বলে, "বহুৎ আচ্ছা, মেরাজান ! কেয়াবাৎ ” সুভদ্ৰা আবার তার মুখে হাত চাপা দেয়। শেষরাত্রে ওস্তাদের ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল। তাদের দু'জনের বড় পুটলিটি খুলিয়া সুভদ্রা তার শাড়ী-সেমিজের একটি ছোট পুটুলী করিতেছে। মুখ ফিরাইয়া ওস্তাদকে চাহিয়া থাকিতে দেখিয়া সুভদ্ৰা বলিল, ‘পালাচ্ছি ওস্তাদ। চুপি চুপি পালাচ্ছিলাম, তুমি জািগলে কেন ? ওস্তাদ বাজে কথা কিছু বলিল না, ব্যস্ত হইল না। ধীরে ধীরে উঠিয়া বসিল। VSS