পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী পারে, কিন্তু যা-খুশী করিবে কি ? কি আছে যা-খুশী করার ? পথে দাড়াইয়া উলঙ্গ হইয়া নাচিবে ? সহরের পাশে যে নদী আছে তার স্রোতে ভাসিয়া যাইবে ? না, বিষ খাইবে ? সাধনকে সে মিনতি করিয়া বলে, “এখান থেকে পালাই চল, এ্যা ? তেমনি ভাবে ঘুরে ঘুরে বেড়ােব দু’জনে, কি মজাটাই হবে।” সাধন বলে, “দূর পাগলি ! ঘুরে বেড়ানোতে আবার মজা কি ?” তা ঠিক, ঘুরিয়া বেড়ানােতে হয় তাে মজা লাগিবে না। সুভদ্রা এখন টের পাইয়াছে, সাধন বৈরাগীর সঙ্গে ক’দিন পথে পথে কাটানোর আসল মজাটা কি ছিল। কি সুখ ছিল সে ঘুরিয়া বেড়ানোর ? কিছুই না। শুধু একটা উত্তেজনা ছিল, প্ৰতি মুহুর্তের উত্তেজনা, পর মুহূর্তে বুঝি কিছু ঘটবে, জীবনে কিছু আবির্ভাব । ঘটিবে কোন কিছুর। ক্ষণে ক্ষণে তখন সব বদলাইয়া যাইত, মাটির পথের পরে আসিত সুরকির পথ, হাট বাজারের পরে আসিত মাঠ, তাড়িখানার পরে আসিত দেব মন্দির, একজনের কুৎসিত মন্তব্যের পর আসিত আরেকজনের সভক্তি প্ৰণাম, মুচির ঘরের আশ্রয়েয় পরে আসিত বড়লোকের বাগানবাড়ীর আশ্রয়। এই পরিবর্তন যেন প্ৰমাণের মতই আশা জাগাইয়া রাখিত, এ সমস্তের অতিরিক্ত আরও একটা নতুনত্ব নিশ্চয় আসিবে। সুভদ্ৰা কৃতাৰ্থ হইয়া যাইবে। আর তার মন ছটফট করিবে না, উল্লাসে গদগদ হইয়া সেই নতুনত্বকে বরণ করিয়া বলিবে, এতদিন আসোনি যে বড়, আচ্ছ খামখেয়ালী নিষ্ঠুর মানুষ তো তুমি ? মানুষ ? সে নতুনত্ব কি তবে মানুষ সুভদ্রার ? ফাপরে পড়িয়া সুভদ্র। এদিক ওদিক তাকায় । কত মানুষ চলিতেছে পথ দিয়া, সকলেই একরকম, দেহকাণ্ডের সঙ্গে দু'টি হাত আর পা আঁটা, এবং উপরে একটা মাথা বসানো । কোন নতুনত্ব তো নাই এদের মধ্যে। এদের মধ্যে যাকেই সে বরণ করুক, মুখে হাত চাপা। দিয়া সে শুধু তাকে জড়াইয়া ধরিবে। সে যা চায়, কি চায় তা অবশ্য সে জানে না, কিন্তু যা সে চায় মানুষের মূৰ্তি ধরিয়া আসিলে তো তার চলিবে না। সুভদ্রার মনে তাই সন্দেহ জাগিয়াছে, সাধনের সঙ্গে ঘুরিয়া বেড়াইতে আর ভাল লাগিবে কিনা। জ্ঞান বাড়িয়াছে, প্ৰত্যাশার উত্তেজনাটুকু পর্যন্ত হয়তো এবার জুটিবে না । কিন্ত ওস্তাদের সঙ্গে যদি নিরুদ্দেশ যাত্রা করে ? কাছাকাছি গ্ৰাম আর সহরে ঘুরিয়া বেড়ানোর বদলে যদি আজ যায় দিল্লীতে আর কাল যায় বোম্বায়ে এবং তার VS 9