পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি SAC করেনি। পরাশর সর্বদা একেবারে একা থাকলে তার মতো ভয়ংকর শহুরেকে খুশি করে রাখতে পারার ক্ষমতা তার নেই। এ কথা শিপ্ৰা ভালো করেই জানত। তাই বিদায় করে দিলেও ওরা যে পরিমাণ আসা-যাওয়া বজায় রাখল শিপ্রা সেটুকু গ্রহণ ও অনুমোদন করল। পরাশর বোকা নয়, সে সব বুঝতে পারে। শিপ্রাও বোকা নয়, পরাশর যে সব বুঝতে পারছে এটা বুঝতে পারে সে। কিন্তু পরাশর তার ভানকে গোপন করলেও শিপ্রা এ বিষয়ে কোনো ছলনার আশ্রয় নেয় না। তার জটিল মস্তিষ্কগত হৃদয়াভিযানে তাই একটি মনোরম সারল্যের ছাপ পড়ে। পরাশরের তা ভালো লাগে। এদিক দিয়ে সে একটু দুর্বল বোহেমিয়ান। বুদ্ধি দিয়ে গড়ে তোলা ভালোবাসার মধ্যেও সে একটু বোকামি একটু সরলতার খাদ পছন্দ করে। তাঁর রঙিন কাগজের ফুলটির অন্তত চেহারায় আসল ফুলের মতো হওয়া চাই। অনিন্দিতা মার কাছে যে দুদিন অপেক্ষা করে শিপ্রাকে চলে যেতে বলবে বলেছিল সে দিন দুটি পার হয়ে যাবার আগে নিজের প্রয়োজনেই শিপ্রা তার সৃষ্টি করা শহরকে নিজের চারিদিকে ঘনীভূত করে আনল। বাইরে সাধারণের কাছে সে যতটুকু প্ৰকাশ করতে লাগল তা প্রশংসনীয় না। হলেও এত বেশি নিন্দনীয় নয় যে সে জন্য তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া যায়। সর্বনাশের ধারে এসে শিপ্রা। তাই অল্পের জন্য বেঁচে গেল। তাকে একদিন একটু সাবধান করে দেবার বেশি অনিন্দিতা আর কিছুই করতে পাবল না। বদনাম কুডোেচ্ছ কেন শিপ্রাদি ? অনেক বয়েস হল, এই বেলা একটু কুড়িয়ে না নিলে আর তো পাব না। পরেব বাডি অতিথি হয়ে থাকবাব সময় কোনো বিষযে বাড়াবাডি ভালো নয়, অনিন্দিতা এই কথাটাই এ বকম মোলায়েম করে শিপ্রাকে বোঝাতে চেয়েছিল। কিন্তু শিপ্রা এখন কিছুই বুঝতে S. r কলকাতা মস্ত শহর। বদনাম তৈরি করার কম্পিটিশন পর্যন্ত সেখানে এমন জোরালো যে আমি পাত্তা পাই না অনি। তাছাড়া, কলকাতার বদনাম কর্তাদের কানে গেলে চাকরিটা যাবে। অনিন্দিতা তার মুদ্রাদোষের আশ্রয় নিয়ে বললে, তোমার স্বভাব সত্যি ভারী খারাপ হয়ে গেছে শিপ্রাদি। গাঁয়ে এসেও কদিন একটু সামলে চলতে পার না ? শিপ্রা গুনগুন করে গান ধরে দিল। বললে, এতদিনে একটু বসন্ত এসেছে, এত জেলাস হসনে অনি। তোর গোল্ডেন ড্রিম তোরই থাকবে। অনিন্দিতাকে একটু হাসতে হল। আনি যেদিন জেলাস হবে অনির তুলনায় জগতের সবাই সেদিন হবে বদ্ধ পাগল। বাজে সেন্টিমেন্টর চেয়ে কমনসেন্স আমি বেশি পছন্দ করি। এ হল রিয়ালিজমের যুগ। এ যুগে প্রাকটিকাল না হলে কোনো মেয়ের চলে ? শিপ্রা তখনও গুনগুন করে গান করে। অনিন্দিতার মুদ্রাদোষ কপালেব ক্ষতচিহ্নটি আঙুল দিয়ে ঘষা আর শিপ্রার মুদ্রাদোষ গুনগুনানো গান। তোর বুদ্ধি এখনও কঁচা আছে অনি। পৃথিবীতে রোমান্স না থাকলে মেয়েদের উপায় আছে? রোমান্টিক যুগে মেয়েদের ভেঁাতা হওয়া চলত, হাজার প্র্যাকটিকাল হলেও ক্ষতি ছিল না। এখন পুরুষরা রোমান্স ভুলতে বসেছে, সিনিক আর প্র্যাকটিক্যাল হয়ে উঠেছে। মেয়েদেরই এখন রোমান্টিক সেন্টিমেন্টাল সব কিছু হওয়া দরকার। নইলে তারা টিকবে কী করে ? স্যানসক্রিট পড়ে পড়ে তুই যেন কেমন হয়ে গেছিস অনি। মানিক ১ম-১২