পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Sobr মানিক রচনাসমগ্ৰ অনিন্দিতা খানিকক্ষণ ভেবে বললে, তুমি তাহলে সিরিয়াস শিপ্রাদি ? সময় কাটােচ্ছ না। শিপ্রা গভীর হয়ে বললে, সময় কাটাবার মতো সময় আর আছে কই? সিরিয়াস না হয়ে একটা ছোটো ছেলেকেও কি এ ব্যযসে ভোলাতে পারব ? অনিন্দিতা গম্ভীর হয়ে বললে, পরাশর তোমার চেয়ে তিন-চার বছরের ছোটো। নিজের বোকামি বুঝতে পেরে শিপ্রা। তৎক্ষণাৎ গাম্ভীৰ্য পরিত্যাগ করলে। হেসে বললে, এই যে জেলাসি উপচে উঠছে! এবার অনিন্দিতা তর্কচ্ছলেও এ কথার প্রতিবাদ করলে না। নিজের সম্বন্ধেও অনিন্দিতা কখনও মিথ্যা কথা বলে না। অন্তত তার ধারণা তাই। অর্থাৎ সাধারণ সুস্থ মানুষের মতো নিজের সম্বন্ধে সে অনেক ভুল ধারণা পোষণ করে। শিপ্রা সম্বন্ধে পরাশরের সঙ্গে একদিন সে অত্যন্ত নির্মমভাবে আলোচনা করলে। এতে অপমানের প্রশ্নটা খুব বড়ো বলে এই নির্মমতার প্রয়োজন ছিল। বিশেষত সংক্ষেপে তার জেরাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে পবাশব ব্যাপারটাকে আরও জটিল কবে তুললে। অনিন্দিতা অশ্রু গোপন করে বললে, আজ পর্যন্ত তুমি অনেক অন্যায় করেছ। কখনও কিছু গোপন করার চেষ্টা কবনি বলে তোমাকে শ্রদ্ধা করতাম মন্টু। এ থেকে তোমাব বোঝা উচিত এখন যা করছি সেটা অন্যায় নয। অন্যায় হলে গোপন করতাম না । অন্যান্য কী? তুমি পাপ করছা! পাগল, এ হল ভালোবাসা। ভালোবাসা অতি পবিত্র জিনিস, স্বগীয়। পরাশর তার বাছা পোশাকি হাসিটি হাসল। যদি কখনও কাউকে ভালোবাস আনি তা হলে জানতে পারবে ভালোবাসা কত উচু স্তরের জিনিস! এর জবাবে অনিন্দিতা বললে, তুমি কলকাতা যাবে কবে? শিপ্রার স্কুল খুললে একসঙ্গে যাব। অনিন্দিতা মবিয়া হয়ে বললে, তোমার বাবা রেগে আগুন হয়ে আছেন। তোমার মা রোজ কঁাদেন। তাতে কী। বুড়ো বয়সে সব স্বামী-স্ত্রীর ওরকম ঝগড়াঝাটি হয়। তখন অনিন্দিতা বুঝতে পারল মনে মনে একটা গভীর ষড়যন্ত্র করে পরাশর প্রথমে শিপ্রাকে আমল দিয়েছিল,--- এখন তব মনের মোড় ঘুরে গিয়েছে। প্রথমে চেষ্টা করে পরাশরের যড়যন্ত্রকে সফল হতে দিলে শিপ্রার উন্মাদ অভিযান ব্যর্থ করা যেত, কিন্তু সে সুযোগও এখন তার নেই। এতকাল সে যে পরাশরের অবাধ্যতা করেছে তার একটা নাটকীয় প্রতিশোধ নেবার সম্ভাবনায় পরাশর অন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুরাতন যুগের ব্যর্থ প্রেমিকের মতো—শুধু কথায় নয়, কাজেও সে আত্মহত্যা করে ছাড়বে। কিন্তু বেশি প্রতিবাদ ভালো নয়! অনিন্দিতা চুপ করে গেল। নদীতীরে শারদীয় কাশগুচ্ছের এবার অভাব হয়েছে। আকাশের টুকরো টুকরো বুপালি মেঘ মানুষের মনোবাসনার মতো শিথিল মন্থর গতিতে ভেসে বেড়ায়। নদী ও পুকুরের জলে এখনও পর্যন্ত বর্ষার অস্বচ্ছতা থেকে যাওয়ায় পরিষ্কার প্রতিবিম্ব ফোটে না। অনিন্দিতা রাঁধে, চুল বাঁধে, বই পড়ে, পাড়া বেড়াতে যায়। পরাশর ও শিপ্রার গোপন পরামর্শ অফুরন্ত হয়ে থাকে। গোপন অভিপ্ৰায়ের সীমা কণ্ঠের তলদেশে, কিন্তু গোপন আলাপ দিগদিগন্তে ছড়িয়ে যায়। অনিন্দিতা শুনতে পায় আগামী