পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী ՀԳ আনকেবা নতুন জামা, দর্জিবাড়ি থেকে সোজা তোমায় দিয়ে যাবে,-আমার মেয়ের জামাটামার সঙ্গে ছোয়াছুযিা হবে না ভাই। হলই বা ছোঁযাৰ্ছযি ? বিকালে বিষ্ণুপ্রিয়ার উপহার আসিল। কচি ছেলের দরকারি কয়েকটা জিনিস। গালিচার মতো পুরু ও নবম ফ্ল্যানেলেব কয়েকটি কঁথা, ছেলেকে জড়াইয়া পুটলি করিয়া কোলে নেওয়ার জন্য ধবধবে সাদা কোমল তিনটি তোমালে আর আধা ডজন শেমিজের মতো পাতলা লম্বা জামা। শেষোক্ত পদার্থগুলি মন্দাকে বিস্মিত কবে । এগুলো কী বউ পা আলখাল্লা নাকি ? শ্যামা হাসে : ঠাকুবঝি যে কী! সায্যেবদেব ছেলেরা পরে দ্যাখোনি ? তুমি যেন কত দেখেছি! দেখিনি। গড়ের মাঠে চিড়িয়াখানায় কত দেখেছি! ও, কত তুমি বেড়িয়ে বেড়ােচ্ছ গড়ের মাঠে চিডিয়াখানায়! না ঠাকুরঝি, ঠাট্টা নয, আগে সত্যি নিয়ে যেত, চার-পাঁচবার গিয়েছি যে, সায়েবদের কচি কচি ছেলেদেব এমনি জামা পরিযে ঠেলাগাড়িতে করে আয়ারা বেড়াতে আনত। এমন সুন্দর ছেলেগুলি, চুবি করে আনতে সাধ হত। আমার। পুঝানো কঁথার উপর শ্যামা নূতন কাথা বিছায়, ছেলের গায়ের তৈলাক্ত পেনিটি খুলিয়া বিষ্ণুপ্রিয়ার দেওযা আলখাল্লা পর্যায, তারপব একখানা তোয়ালে জডাইয়া শোয়াইয়া দেয়। আনন্দে অভিভূত হইয়া বলে, কী বকম দেখাচ্ছে দাখো ঠাকুবঝি। মন্দা হাসিমুখে সাব্য দিযা বলে, খাসা দেখাচ্ছে বউ। ওমা, মুখ বাকাব্য যে! ছেলেকে শ্যামা সত্যসত্যই পুঁটুলি করিয়াছে। হাত পা নাড়িতে না পারিয়া সে হাঁপাইয়া কাদিয়া ওঠে। তােযালেট শ্যামা তাড়াতাড়ি খুলিয়া লয। মন্দা শিশুকে কোলে লইয়া বলিতে থাকে আ সোনা, অ মানিক,-—তোমায বেঁধেছিল, শক্ত কবে বেঁধেছিল, মবে যাই । শ্যামার গাযে কাটা দেয়, মাথা দুলাইয়া ঝোক দিযা দিযা মন্দা বলিতে থাকে, মেবেছে? আমাৰ ধনকে মেরেছে, “ কে মেবেছে রে! অ লো 'Ss) (G's - - - - শ্যামা উত্তেজিত হইযা বলে, ও ঠাকুরঝি, ও যে হাসল! মন্দা দেখিতে পাষা নাই। তবু সে সাব্য দিয়া বলে, পিসির আদরে হাসবে না ? কী আশ্চর্য কাণ্ড ঠাকুবঝি ! ওইটুকু ছেলে হাসে । এ রকম আশ্চৰ্য্য কাণ্ড দিবারাত্রিই ঘটিতে থাকে। খোকার সম্বন্ধে এবাব সে কিনা অনেক বিষয়েই উদাসীন থাকিবে ঠিক করিয়াছে, খোকার আশ্চর্য কাণ্ডগুলিতে অনেক সময শ্যামা শুধু তাই মনে মনে আশ্চর্য হয়, বাহিবে কিছু প্রকাশ করে না। খোকার হােত পা নাড়িয খেলা করা দেখিয়া মনে যখন তাহার দোলা লাগে, খেলার অর্থহীন হাত-নাড়া আর ক্ষুধার সময় স্তন খুজিয়া হাত-নাডার পার্থক্য লক্ষ করিয়া তাহাব যখন সকলকে ডাকিয়া এ ব্যাপ * দেখাইতে ইচ্ছা হয়, শ্যামা তখন নিজেকে সতর্ক করিয়া দেয়। স্মবণ করে যে সন্তানকে উপলক্ষ করিয়া জননীর অসংযত উল্লাস অমঙ্গলজনক। আনন্দের একটা সীমা ভগবান মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন মানুষ তাহা লঙ্ঘন করিলে তিনি রাগ করেন। তবু, সব সময় শ্যামা কি আর নিজেকে সামলাইয়া চলিতে পারে? অন্যমনস্ক অবস্থায় হঠাৎ একসময় বা করিয়া খোকাকে সে কোলে তুলিয়া লয়। তাহার পাঁজরের একদিকে থাকে কুৎপিণ্ড আরেক দিকে থাকে খোকা, , খাকার লালিম পা দুটি হইতে কেশবিরল মাথাটি পর্যন্ত শ্যামা অসংখ্য চুম্বন করে, দীর্ঘনিশ্বাসে খোকার দেহের আত্মাণ লয়। তারপর সে অনুতাপ করে। বাড়াবাড়ি করিয়া একবার তাহার সর্বনাশ হইয়াছে, তবু কি শিক্ষা হইল না ? ?