পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in VS Ro মানিক রচনাসমগ্র মিষ্টির অভাব আশ্রমে কখনও হয় না, ভাতের চেয়ে এ সব আহার্যের মর্যাদাই এখানে বেশি, মালতীর স্থায়ী ব্যবস্থা করা আছে। আনন্দ প্রথমে কিছু খেতে চাইল না। কিন্তু হেরম্ব তার ক্ষুধার সঙ্গে তার মানসিক বিপর্যয়ের একটা সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করায় রাগ কবে একরাশ খাবার নিয়ে সে খেতে বসিল । হেরম্ব বলল, সব খাবে? খাব ৷ তোমার সুমতি দেখে খুশি হলাম, আনন্দ! সে চিত হয়ে শুয়ে চোখ বোজা মাত্র আনন্দ সব খাবার নিয়ে বাইরে ফেলে মুখ হাত ধুয়ে এল। হেরম্বের বালিশের পাশে এলাচ লবঙ্গ ছিল, একটি এলাচ ভেঙে অর্ধেক দানা সে হেরম্বের মুখে গুজে দিল। বাকিগুলি নিজের মুখে দিয়ে বলল, আমি শূতে যাই ? হেরম্ব চোখ মেলে বলল, যাও। যেতে চাওয়া এবং যেতে বলা তাদের আজ উচ্চারিত শব্দগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইল। হেরম্ব ভেবেছিল আজ বুঝি তার সহজে ঘুম আসবে। দেহমানের শিথিল অবসন্নতা অল্পক্ষণেব মধ্যেই গভীব তন্দ্ৰায় ডুবে যাবে। কিন্তু কোথায় ঘুম ? কোথায এই সকাতর জাগরণের অবসান ? ঘরের কমানো আলোর মতো স্তিমিত চেতনা একভাবে বজায় থেকে যায, বাড়েও না কমেও না। হেরম্ব উঠে বাইরে গেল। মালতী আজ তার নিজের ঘর ছেড়ে অনাথের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে, মালতীর ঘরে শিকল তোলা। আনন্দই বোধ হয় সন্ধ্যার সময় এ ঘরে একটি প্রদীপ জেলে দিয়েছিল, জানােলা দিয়ে হেরম্বের চোখ পড়ল। তেল নিঃশেষ হয়ে প্রদীপের বুকে দপদপ কবে সলতে পুড়ছে। নিজের ঘব থেকে লণ্ঠন এনে হেরম্ব চোরের মতো শিকল খুলে মালতীর ঘরে ঢুকল। আলমারিতে ছিল মালতীর কারণের ভান্ডার, কিন্তু সবই সে প্রায় আজ অনাথের ঘরে সঙ্গে নিয়ে গেছে। খুঁজে খুঁজে কাশীর একটি কাজ করা ছোটাে কালোরঙের মাটির পাত্রে হেব্বস্ব অল্প একটু কারণ পেল। তাই এক নিশ্বাসে পান করে আবার চুপিচুপি ঘরেব শিকল তুলে নিজের ঘবে ফিরে গেল। কিন্তু মালতীব কারণে নেশা আছে, নিদ্রা নেই। হেরম্বের অবসাদ একটু কমল, ঘুম এল না। বিছানায় বসে জানালা দিয়ে সে বাইরে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইল। এমন সময় শোনা গেল মালতীব ডাক। হেরম্ব এবং আনন্দ দুজনের নাম ধরে সে ফাটিযে চিৎকার করছে। দুজনে তারা প্রায় একসঙ্গেই মালতীর ঘরে প্রবেশ করল। অনাথের প্রায় আসবাব-শূন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘরখানা মালতী এক বেলাতেই নোংরা করে ফেলেছে। সমস্ত মেঝেতে কাদামাখা পায়ের শুকনো ছাপ, এক কোণে অভুক্ত আহার্য এখানে-ওখানে ফলের খোসা ও আমের অাঁটি। একটি মাটির পাত্র ভেঙে কারণের স্রোত নর্দমা পর্যন্ত গিয়েছিল, এখনও সেখানে খানিকটা জমা হয়ে আছে। ঘরে তীব্ৰ গন্ধ। কিন্তু মালতীকে দেখেই বোঝা গেল বেশি কারণ সে খায়নি। তার দৃষ্টি অনেকটা স্বাভাবিক, कथा९3 ग्र्०ठे ! মালতী বলল, একা আমার ভয় করছে, হেরম্ব। হেরম্ব জিজ্ঞাসা করল, কীসের ভয় ? মালতী বলল, তা জানি নে, হেরম্ব, ভয়ে আমার কুৎকম্প হচ্ছিল? তোমরা এ ঘরে শোও।