পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in মানিক রচনাসমগ্র صDN বলিল বটে, যামিনীর মুখে কালি পড়িয়াছে কীসের ? শশীর কাছে যামিনী যেন অভিনয় করিতেছে, একটা পাণ্ডুর ভয। আর কালো চিন্তার রাশিকে গোপন করিবার অভিনয়। শশী কড়াসুরে বলিল, আমি সেনদিদির চিকিৎসার ভার নিলাম ঠাকুর্দা। ছি, ছি, আজ পর্যন্ত কিছুই করেননি? খায় নাকি আমার ওষুদ ? শশী ঘরে গিয়া বসিল। কী ভাবিয়া যামিনীও ঘরের মধ্যে গিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। শশী দারুণ বিপন্ন বোধ করিতেছিল। আর বিষগ্নতা। কয়েক দিন আগে সাতগাঁয়ে সে একটি বসন্তের রোগী দেখিতে গিয়াছিল। তাহাকে শশী বঁাচাইতে পারে নাই। বাঁচাইবার চেষ্টাও সে করিতে পারে নাই, তাকে ডাকা হইয়াছিল। একেবারে শেষ মুহুর্তে। সে পর্যন্ত রোগীর চিকিৎসা করিয়াছিল সাতগাঁর কবিরাজ যামিনীক পূর্বতন ছাত্র ভূপতিচরণ। শশীর হঠাৎ মনে পড়িয়াছে, সেই রোগীটি মারা যাইবার পব যামিনী হাসিয়া বলিয়াছিল, আমার ছাত্র যাকে ছাড়পত্র লিখে দিল তাকে বাঁচাবে শশী, আমাদের শশে ? শশী প্ৰাণ দিয়া সেনদিদির চিকিৎসা ও সেবা আরম্ভ করিল। অনা রোগীরা তাহাকে ডাকিয়া পায় না। বাড়িতে কারও জ্বরজ্জ্বালা হইলে চোখের পলকে পরীক্ষা শেষ করিয়া সে ওষুধ দেয়,--না বলিলে আর খবর নেয় না। বন্ধুবান্ধব আত্মীযস্বজন সকলকে সে অবহেলা করে। যায় না। হাবু ঘোষের বাড়ি, বিনা কাজে অথবা মতিকে ইনজেকশন দিতে। কুসুম ভাবিল, শশী বুঝি রাগ করিয়াছে। তালবনেব। তালপুকুরে পদ্ম তুলিতে গিয়া মতি আশা করিতে লাগিল, ছোটােবাবু আজ নিশ্চয় আসবে, ছোটোবাবুকে একডালা পদ্ম দেব। কিন্তু কুসুমের মনে শশীব উপর রাগ কমিল না। মতির পদ্মফুলের বিচি দিয়া বাধা হইল স্তবকবি । শুধু সেনদিদিব ব্যবস্থা করিতে হইলে শশী হয়তো চারদিকে তাকানোব সময় পাইত H-চিকিৎসা আরম্ভ কবিয এ বাড়িতে গোপালের এবং ও বাড়িতে যামিনীব উপদেশ সমালোচনা ও বাধাদানের বহবে সে বিপন্ন ও বিব্রত হইয়া রহিল। ৰ্যাপারটা সে ভালো বুঝিতে পারে না। সময় সময। তাহার মনে হয়, তাহাব চিকিৎসায় ওদের শ্রদ্ধা নাই এই কথাটা এমনিভাবে প্রকারান্তরে তাহাকে জানাইয়া দেওয়া হইতেছে। কিন্তু চিকিৎসার আর কোনো ব্যবস্থাও তো নাই! ভালো হোক, মন্দ হোক তাব চিকিৎসাকে ছটিয়া ফেলার মধ্যে যুক্তি আছে কোনখানে ? আমার ওষুদ খায় না, বলিযা যামিনী নিজে চিকিৎসা কবিতে বাজি নয়,---ওরা মারিয়া ফেলিতে চায় নাকি সেনদিদিকে ? তাই বা কেন চাহিবে ? তা ছাড়া যামিনীর এই লজাকব পাগলামিতে গোপাল এ ভাবে সাহায্য করিতেছে কেন, তার স্বাৰ্থ কী ? ব্যাপাব। সাত রহস্যময়ই হোক, শশী একা সেনদিদির তিনটি যমের সঙ্গে লড়াই কবিতে লাগিল। যামিনীকে সে জিজ্ঞাসা করে, বড়ো গোল শিশির ওষুধ কী হল। ঠাকুর্দা ? যামিনী বলে, তিন দাগ ছিল না? খাইয়ে দিয়েছি। কী যে সব ওষুদ তোমার শশী,---সব ওষুদে হয় মদ, নয়। সিরাপের গন্ধ! শশী সািভয়ে বলে, খাইয়ে দিয়েছেন ? গোল শিশির ওষুধটা খাইয়ে দিয়েছেন? তা দিলাম। বইকী? ছটফট করছিল দেখে ভাবলাম তোমার বুগি তোমার ওষুদ, দিই খাইয়ে! শশী রাগ করিয়া বলে, রোগী আমার নয়। ঠাকুর্দা, আমি চললাম। আপনাদের যা খুশি করুন। সে একরকম চলিয়াই আসে। বাড়ির বাহিরে গিয়া গতি শ্লথ করিয়া দাঁড়ায়। মনে পড়ে সেনদিদির ভীরু কতবা চাহনি, একান্ত নির্ভর। শশী আবার ফিরিয়া যায়। বলে, ওটা যে গুটি বসাবার ওষুধ, সাতদিন আগে ও ওষুধটা দিয়েছিলাম, আপনি জানতেন না ?