পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in \9br মানিক রচনাসমগ্ৰ অনুভূতি খাপ খায় মাত্র, শ্যামার কাছে বেশি আর কিছু আশা করা যায় না। অথচ এদিকে বাহিরে মদ খাইয়া একা একা স্মৃর্তিও জমে না, সব কী রকম নিরানন্দ আসার মনে হয়। অনেক প্রত্যাশা করিয়া হয়তো সে তাহার পরিচিত কোনো মেয়ের বাড়ি যায়, কিন্তু নিজের মনে আনন্দ না থাকিলে পরে কেন আনন্দ দিতে পরিবে, তাও টাকার বিনিময়ে ? আজকাল হাজার মদ গিলিযাও নেশা পর্যন্ত যেন জমিতে চায় না, কেবল কান্না আসে। কত কী দুঃখ উথলিয়া ওঠে। এক একদিন সে করে কী, সকাল-সকাল প্রেস হইতে বাড়ি ফেরে। শ্যামার রান্নার সময় সে। ছেলেমেয়েদের সামলায়, বারান্দায পায়চারি করিয়া ছোটো খোকা মণিকে ঘুম পাড়ায়, মুখের কাছে বাটি ধরিয়া বুকুকে খাওয়ায দুধ। বুকুকে কোলে করিয়া ঘুম পাড়াইতে হয় না, সে বিছানায় শুইযাই ঘুমায়, ঘুমাইয়া পড়িবার আগে একজনকে শুধু তাহার পিঠে আস্তে আস্তে চুলকাইয়া দিতে হয়। তারপর বাকি থাকে বিধান, সে খানিকক্ষণ পড়ে, তারপর তাহাকে গল্প বলিয়া রান্না শেষ হওয়া পর্যন্ত জগাইয়া বাখিতে হয়। এ সব শীতল অনেকটা নিখুঁতভাবেই করে। সকলের খাওয়া শেষ হইলে গর্কিত গাম্ভীর্যের সঙ্গে তামাক টানিতে টানিতে শ্যামার কী বলিবার আছে শুনিবােব প্রতীক্ষা করে। শ্যামাব কাছে সে কিছু প্ৰশংসার আশা করে বইকী! শ্যামা কিন্তু কিছু বলে না। তাহাব ভাব দেখিযা মনে হয়, সে রান্না কবিযাছে শীতল ছেলে রাখিয়াছে, কোনো পক্ষেবই এতে কিছু বাহাদুরি নাই। শেষে শীতল বলে, কী দুষ্ট্ৰই যে ওরা হয়েছে শ্যামা, সামলাতে হয়রান হয়ে গেছি, - ওদেব নিযে তুমি রান্না করা কী করে ? শ্যামা বলে, মণিকে ঘুম পাড়িয়েনি, বুকুকে খোকা বাখে। এত সহজ ? শীতল বড়ো দমিয়া যাম, সন্ধ্যা হইতে ওদেব সামলাইতে সে হিমসিম খাইয়া গেল, শ্যামা এমন অবলীলা কমে তাহদের ব্যবস্থা করে ? শ্যামা হাই তুলিয়া বলে, এক একদিন কিন্তু ভারী মুশকিলে পড়ি বাবু, মণি ঘুমােয় না, বুকুটা ঘ্যানঘান করে, সবাই মিলে আমাকে ওরা খেয়ে ফেলতে চায়, মরেও তেমনি মার খেযে ! তুমি বাড়ি থাকলে বঁচি, ফিরো দিকি একটু সকাল-সকাল বোজ ? শ্যামা আচল বিছাইয়া শ্ৰান্ত দেত মেঝেতে এলাইয়া দেয়, বলে, তুমি থাকলে ওদের ভালো লাগে, সন্ধাবেলা তোমায় দেখতে না পেলে বুকু তো আগে কেঁদেই অস্থির হত। শীতল আগ্রহ গোপন কবিয়া জিজ্ঞাসা করে, আজকাল কঁদে না ? আজকাল ভুলে গেছে। হ্যাগো, মুদি দোকানে টাকা দাওনি ? দিয়েছি। মুদি আজ সত্যভামাকে তাগিদ দিয়েছে। তামাক পুড়ে গেছে, এবার রাখো,--দেব আরেক ছিলিম সেজে ? শীতল বলে, না থাক। আবোলতাবোল খরচ করে কেন যে টাকাগুলো নষ্ট কর, দোতলায় একখানা ঘর তুলতে পারলে একটা কাজের মতো কাজ হত, টাকা উড়িয়ে দিয়ে লাভ কী? তারপর তাহারা ঘরে যায়, মণি আর বুকুর মাঝখানে শ্যামা শূইয়া পড়ে। বিধান একটা স্বতন্ত্র ছোটো চৌকিতে শোয়, শোয়ার আগে একটা বিড়ি খাইবার জন্য শীতল সে চৌকিতে বসিবামাত্র বিধান চিৎকার করিয়া জাগিয়া যায়। শীতল তাড়াতাড়ি বলে, আমি রে খোকা, আমি, ভয় কী ?-- বিধান কিন্তু শীতলকে চায় না, সে কঁদিতে থাকে। শ্যামা বলে, আয় খোকা, আমার কাছে আয় ।