পাতা:মানুষের ধর্ম্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
মানুষের ধর্ম্ম

নেই। প্রভূত হয়েচে মানুষের ভুলভ্রান্তি নিষ্ফলতা, পথে পথে তারা প্রকাণ্ড ভগ্নস্তূপরূপে ছড়িয়ে আছে; মানুষের দুঃখ ব্যথার আঘাত হয়েচে অপরিসীম, তারা অবরুদ্ধ সার্থকতার শৃঙ্খল-ছেদনের কঠিন অধ্যবসায়, এ সমস্ত এক মুহূর্ত্তও কে সহ্য করতে পারত মানুষের অন্তরবাসী ভূমার মধ্যে যদি এর চিরন্তন কোনো অর্থ না থাকত। মানুষের সকল দুঃখের উপরকার কথা এই যে, মানুষ আপন চৈতন্যকে প্রসারিত করচে আপন অসীমের দিকে, জ্ঞানে প্রেমে কর্ম্মে বৃহত্তর ঐক্যকে আয়ত্ত করতে চলেচে, আপনার সকল মহৎ কীর্ত্তিতে তাঁর নিকটতর সামীপ্য পাবার জন্যে ব্যগ্র বাহু বাড়িয়েচে যাঁকে তে সর্ব্বগং সর্ব্বতঃ প্রাপ্য ধীরা যুক্তাত্মানঃ সর্ব্বমেবাবিশন্তি। মানুষ হয়ে জন্মলাভ ক’রে আরাম চাইবে কে, বিশ্রাম পাব কোথায়, মুক্তি পেতে হবে মুক্তি দিতে হবে এই যে তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য—

মহাবিশ্বজীবনের তরঙ্গেতে নাচিতে নাচিতে
নির্ভয়ে ছুটিতে হবে সত্যেরে করিয়া ধ্রুবতারা,
মৃত্যুরে না করি' শঙ্কা। দুর্দ্দিনের অশ্রুজলধারা
মস্তকে পড়িবে ঝরি’, তারি মাঝে যাব অভিসারে
তারি কাছে, জীবনসর্ব্বস্বধন অর্পিয়াছি যারে
জন্ম জন্ম ধরি’।