পাতা:মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১
মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা
১১

 কাজেই এইসব অসভ্য, বর্বর ও সংস্কৃতিহীন লোকেরা ভারতের সভ্যতার মহত্ত্বকেই বা উপলদ্ধি করবে কেমন করে, আর তার মর্মবাণীকেই বা অনুধাবন করবে কেমন করে? এই সব অসভ্যের দল চুরি-ডাকাতি করে হঠাৎ বড়লোক হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করেছে। চীৎকার করে বলতে শুরু করেছে যে, পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র তারাই সভ্য আর সবাই অসভ্য। অথচ তাদের আচার-আচরণ প্রতি মুহূর্তে প্রমাণ দিচ্ছে যে, আজও তারা পশুত্বের উপরে বেশি দুর উঠতে পারেনি। তাই তো তাদের দেশের ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে পশুদের মতই মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। পতি-পত্নীর সম্পর্ক বলতে সেখানে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হবার ফলে পরিবার ধ্বংসপ্রায়। পশুদের চেয়েও অবাধ যৌন সম্ভোগের ফলে ‘এইডস্’ রোগ এখানে লেলিহান শিখার মতই ছড়িয়ে পড়ছে। চুরি, রাহাজানি, খুন, জখম, মাদকাসক্তি এবং নারীর প্রতি বলাৎকারে এদের সমাজ সকলের শীর্ষে। ঘন ঘন বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে জন্ম নিচ্ছে পিতা-মাতার স্নেহ থেকে বঞ্চিত বেপরোয়া, ভয়ঙ্কর এক নাবালক অপরাধী শ্রেণি। তারা বন্দুক নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে আর সহপাঠীদেরই মেরে শেষ করে ফেলছে।

 তাই এই অসভ্যের দল যখন ভারতীয় সমাজকে অসভ্য বলে এবং এই অসভ্য সমাজের প্রতিনিধি মার্কস মন্তব্য করেন যে, “ভারতবর্ষে বৃটিশকে একটা দ্বিবিধ কর্তব্য পালন করতে হবে, একটি ধ্বংসমূলক এবং অন্যটি গঠনমূলক—পুরাতন এশিয় সমাজকে ধ্বংস করে এশিয়ায় পাশ্চাত্য সমাজের বৈষয়িক উন্নতির প্রতিষ্ঠা করা”, তখন প্রশ্ন করতে ইচ্ছা হয় যে, কোন্ জিনিসটাকে মার্কস সভ্যতার নির্ণায়ক মানদণ্ড রূপে ব্যবহার করতে চান? কে কত জামাকাপড় পরে তাই যদি এই মানদণ্ড হয় তবে মার্কস সাহেবকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে এস্কিমোরা তাদের থেকে বেশি সভ্য। আর গায়ের রঙের বিভিন্নতা যদি অসভ্যতার মাপকাঠি হয় তবে তার উপযুক্ত জবাব — ঘোড়াই বিভিন্ন রঙের হয়, আর গাধা সব এক রঙেরই হয়।

 দাম্ভিক মার্কসের মতে ভারতের কোনো অতীত ইতিহাস নেই। কাজেই মেনে নিতে হয় যে, তাঁর দেশ জার্মানীর অবশ্যই অতীত ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাস কি মার্কস সাহেব কখনও অধ্যয়ন করে দেখেছেন যে, ভারতে যখন ঋগ্বেদ, সামবেদ ইত্যাদি, কিংবা রামায়ণ, মহাভারত, সাঙ্খ্য দর্শন, অর্থশাস্ত্র ইত্যাদি রচিত হচ্ছিল তখন তাঁর দেশবাসীরা পুরানো প্রস্তর না নব্য প্রস্তর যুগে ছিল? তখন কি তারা আগুন জ্বালাতে শিখেছিল না কাঁচা মাংস খেত? নাকি তখন তাঁরা পুরোপুরি মানুষ হয়েই ওঠেনি, শাখামৃগ হয়ে গাছে অবস্থান করছিল? যাইহোক, মার্কস বিপ্লবের শুরু। তাই একজন যকৃতের রুগী যেমন সব কিছুকে হলুদ দেখে, তিনিও সেই রকম সব কিছুর মধ্যেই বিপ্লব দেখতে পান। তাই তো তিনি বৃটিশের দ্বারা ভারতীয় বয়ন শিল্পের নির্মম ধ্বংসের মধ্যেই বিপ্লব দেখতে পেয়েছেন এবং লিখেছেন, “ইংরাজের হস্তক্ষেপ সূতাকাটুনীর স্থান করেছে ল্যাংকাশায়ারে আর তাঁতীর স্থান রেখেছে বাংলায়; অথবা হিন্দু সূতাকাটুনী ও তাঁতী উভয়কেই নিশ্চিহ্ন করে ঐ সব ছোট ছোট অর্ধবর্বর, অর্ধসভ্য গোষ্ঠীগুলোকে ভেঙে দিয়ে তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তিতে ধ্বংস করেছে এবং এইভাবে সে যে সামাজিক বিপ্লব সংঘটিত করেছে তা এশিয়ায়, এতদিন যা শোনা গেছে তার মধ্যে, সর্ববৃহৎ এবং সত্যি কথা বলতে, একমাত্র বিপ্লব”।

 তাহলে মার্কসের মতে বিপ্লব বলতে কি বোঝায়? ভারতের (বা বৃহদর্থে এশিয়ার) যা কিছু বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা আছে তার সব কিছুকেই বিসর্জন দিয়ে বা বলপূর্বক ধ্বংস করে সমস্ত ইয়োরোপীয় হালচালকে অন্ধভাবে অনুকরণ করা এবং ভারতের মাটিতে তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত