পাতা:মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা

চলেছে। আমাদের মার্কসবাদীরা এই সেকুলার তত্ত্বের এক প্রবল সমর্থক এবং দারুণভাবে সেকুলারবাদী। তবে এই সেকুলারবাদের হীন উদ্দেশ্য যে মুসলমান তোষণ তা আর দেশের মানুষের জানতে বাকি নেই। এই সেকুলারবাদী মুসলীম তোষণের নীতি গ্রহণ করেই পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মার্কসবাদী সরকার বাংলাদেশীদের অনুপ্রবেশে সাহায্য করছে।

 এই প্রসঙ্গে সেকুলারবাদী ঐতিহাসিকরা ভারতের ইতিহাসে কি পরিমাণ বিকৃতি সাধন করে সমূহ ক্ষতি করে চলেছেন তার কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া চলে। এঁরা প্রচার করছেন যে ভারতে মুসলমান শাসনের যুগ পরাধীনতার যুগ তো নয়ই, বরং সুবর্ণ যুগ। অত্যাচারী, লম্পট ও নিষ্ঠুর আকবরকে তাঁরা মহান সম্রাট অশোকের সমান আসনে বসিয়েছেন। তাঁদের মতে আকবর রাজস্থান জয় করে সমস্ত ভারতকে এক ঐক্য বন্ধনে বাঁধার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু হীনমতি রাণা প্রতাপ আকবরের সেই মহান প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিয়েছেন। তেমনি মহান সম্রাট ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্য জয় করে ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ক্ষুদ্রবুদ্ধি রাজা শিবাজী সেই মহান প্রচেষ্টায় বাধা দিয়েছেন। এঁদের মতে বিদেশী অত্যাচারী, লম্পট মুসলমান শাসকরা সকলেই ছিল মহান ও উদার এবং বদমাস হিন্দুগুলোই নানারকম সমস্যার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দের মতে এই সব মুসলমান দস্যুরা তাদের ৭০০ বছরের শাসনকালে এত ব্যাপক হিন্দুহত্যা করেছে যে, হিন্দুর সংখ্যা ৬০ কোটি থেকে কমে ২০ কোটি হয়েছে। (বিশদ বিবরণের জন্য বর্তমান লেখকের “মিথ্যার আবরণে দিল্লি আগ্রা ফতেপুর সিক্রি” দ্রষ্টব্য।)

  দেশদ্রোহী মার্কসবাদীরা ইতিহাসকে কতখানি বিকৃত করতে পারে তা পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মার্কসবাদী সরকার দ্বারা প্রকাশিত যে কোনো স্কুলপাঠ্য ইতিহাসের বই পড়লেই পাঠক পরিষ্কার বুঝতে পারবেন। এই সব পুস্তকে নেতাজীর বিষয়ে দু'লাইনে লেখা হয়, কিন্তু তিতুমীরের বিষয়ে দু’পৃষ্ঠা লেখা হয় এবং ভিয়েতনাম ও চিনের মার্কসবাদী বিপ্লবের বিষয়ে পৃথক অধ্যায় রচিত হয়। এ ব্যাপারে এটাও স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, সেকুলার ঐতিহাসিকদের যে গোষ্ঠী ভারতের ইতিহাসকে বিকৃত করে চলেছেন, তাঁদের মধ্যে মার্কসবাদী দেশদ্রোহীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং প্রকৃতপক্ষে তাঁরাই এটা নিয়ন্ত্রণ করছেন (এ বিষয়ে বিশদ বিবরণের জন্য পাঠক অরুণ শৌরি মহাশয়ের “Eminent Historians” এবং শ্রীপুরুষোত্তম নাগেশ ওক মহাশয়ের “Islamic Havoc in Indian History” দেখতে পারেন।)

 প্রকৃতপক্ষে যে হিন্দুত্ব বর্তমানে সেকুলারবাদী ঐতিহাসিকদের কাছে সর্বাপেক্ষা ঘৃণার বস্তু, সেই হিন্দুত্বই ভারতের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি। কবি বলেছেন, “নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।” কবি এখানে আরও একটা বিষয় বাদ দিয়েছেন, তা হল খাদ্যাভ্যাস। রাজস্থানের জোয়ারের রুটি বাঙালির পেটে সহ্য হবে না। তেমনি দক্ষিণ ভারতের ইলি, দোসা, সম্বর, রসম উত্তর ভারতের মুখে রুচিকর মনে হবে না। কিন্তু এই সব বিবিধের মাঝে মিলনের সূত্রটা কি? কি সেই অদৃশ্য বন্ধন যা এত বিভিন্নতা সত্ত্বেও ভারতের জনসাধারণকে এক নিবিড় ঐক্য বন্ধনে বেঁধে রেখেছে? তা হল গঙ্গা, গায়ত্রী, গীতা ও গোবিন্দ, এই চার গ’র ঐতিহ্য।

 আমাদের মনীষীদের মতে হিন্দু সংস্কৃতি বা হিন্দুধর্ম বা হিন্দুত্বই হল সেই ঐক্যের মূল ভিত্তিভূমি। হিন্দুত্বই হল ভারতের জাতীয়তাবাদ। তাই শ্রীঅরবিন্দ বলেছেন, “I say that is the Sanatana Dharma which is for us our nationalism. This Hindu nation was born with the Sanatana Dharma, with it moves and with it it grows.” অর্থাৎ,