পাতা:মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা
২৫

সেটাই একমাত্র খাঁটি পথ এবং বাদবাকি সবাই যে পথ অনুসরণ করে চলেছে সে সবই মেকী পথ। এ থেকে তাদের সিদ্ধান্ত হল, প্রথমত যে সমস্ত লোক সেই মেকী পথ অনুসরণ করে মেকী ঈশ্বরের ভজনা করে চলেছে তারা ঘৃণ্য ও বধযোগ্য। দ্বিতীয়ত, সেই মেকী ঈশ্বরের ভজনাকারী বিধর্মী লোকেদের ধর্মান্তরিত করে খাঁটি ঈশ্বরের পথে নিয়ে আসতে হবে। সোজা কথায় না হলে বলপ্রয়োগ ও রক্তপাত ঘটিয়েও তা করতে হবে। তৃতীয়ত মেকী ঈশ্বর ও মেকী পথ সম্পর্কিত যে সব গ্রন্থাদি আছে তার থেকে কিছুই শিক্ষণীয় নেই। ঐ সব গ্রন্থ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিলেও কিছু যায় আসে না।

 তাই খ্রিস্টমত বলছে, যে যীশুর শরণাপন্ন না হবে তার পরিত্রাণ নেই (2 Timothy-3) যে খ্রিস্টকে অনুসরণ করবে একমাত্র সেই পরিত্রাণ পাবে (2 Peter-3/13)। অ-খ্রিস্টানদের উপর ঈশ্বরের ক্রোধ বর্ষিত হবে (Hebrews-3/11)। অ-খ্রিস্টানরা বন্য পশু (2 Peter-2/12), ওদের ঘরে ঢুকতে দিও না (2 John-10), ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব কোরো না (2 Corinthian-6/ 14), ওদের কাছ থেকে কিছু গ্রহণ কোরো না (3 John-7) এবং ওরা হল ঈশ্বরহীন পশু (Jude-4)। খ্রিস্টকে অনুসরণকারীরা হল ঈশ্বরের নির্বাচিত প্রিয়পাত্র (Colossians-3/12, Peter-1/1, 2/9, 2/18; Thessalonians-1/4; Titus-1/1 ইত্যাদি)। অ-খ্রিস্টানরা সকলেই নরকের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে (2 Thessalonians-1/89)।

 ঠিক একই ভাবে ইসলাম বলছে, যারা কোরান ও মহম্মদের নবীত্বে বিশ্বাস করে না তারা কাফের এবং পশুর সমান (কোরান-৭;১৭৯)। এরা সবাই নরকে যাবে (ঐ ৩/৮৫) এবং এদের সঙ্গে বন্ধুত্ব কোরো না (ঐ ৫/৫৭)। আল্লা এদের জন্য মর্মস্তুদ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন (ঐ ৪/১৪৭, ৪/১৪৮, ৮/১০-১৪)। এরা নিষ্ঠুরভাবে বধযোগ্য (ঐ ৩৯/৩০-৩২)। এদের যেখানে পাবে বন্দী করবে এবং হত্যা করবে (ঐ ৪/৮৯, ৪/৯১, ২/১৯১)। এদের সঙ্গে অবিরাম যুদ্ধ করো, গর্দানে আঘাত করো (ঐ ৮/৩৯, ৪৭/৪)। ওদের শূলবিদ্ধ করো অথবা হাত-পা কেটে দাও (ঐ ৫/৩৩)।

 বিধর্মী কাফেরদের প্রতি আল্লা কতখানি নৃশংস হতে পারেন, দু একটা উদাহরণ দিলে তা ভালো বোঝা যাবে। কোরানের ৯ম সুরায় ৫ম আয়াতে আল্লা বলেছেন— অতঃপর নিষিদ্ধ মাসমস্হ শেষ হলে অংশীবাদী কাফেরদের যেখানে পাবে বধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওৎ পেতে থাকবে। কিন্তু যদি তারা তওবা (অনুতাপ) করে, নামাজ কায়েম করে ও জাকাত দেয় তবে তাদের মুক্ত করে দেবে। ৪র্থ সুরার ৫৬শ আয়াতে আল্লা বলছেন— যারা আমার আয়াতে বিশ্বাস না করে তাদের আমি অবশ্যই জ্বলন্ত আগুনে দগ্ধ করবো এবং প্রত্যেকবার দগ্ধ করার পর নতুন চামড়ার সৃষ্টি করবো, যাতে তারা নিরন্তর শাস্তি ভোগ করতে পারে। ৫ম সুরার ৩৩শ আয়াতে আল্লা বলছেন— যারা আল্লা ও তার রসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে পৃথিবীতে অশান্তি উৎপাদন করে, নিশ্চয়ই তাদের শাস্তি হল এই যে, তাদের হত্যা করো, কিংবা শূলবিদ্ধ করো, কিংবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেল, কিংবা তাদের দেশ থেকে থেকে বহিষ্কার করো।

 উপরিউক্ত বাণীগুলো থেকে দুটো সিদ্ধান্ত করা চলে। প্রথমত, এই রিলিজিয়নগুলো হল মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টিকারী এক ধরনের তত্ত্ব। সমগ্র মানবসমাজকে এরা বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী— এই দুই শিবিরে ভাগ করে। এগুলো একপ্রকার ঘৃণার তত্ত্ব। এদের ঈশ্বরও অন্য