পাতা:মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা.pdf/৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লেখকের কথা

 আজ ১৯৯৯ সালের ১২ই জুলাই এই “লেখকের কথা” লিখতে বসেছি। এর ঠিক দু’দিন আগে, ১০ই জুলাই, কলকাতার মাটিতে এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেছে। গত ১১ই জুলাই তারিখের আনন্দবাজার পত্রিকার খবর অনুসারে ঐ দিন বিকাল বেলা শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে কমিউনিস্ট লীগ, সেণ্টার ফর দি কমিউনিস্ট রিভলিউশনারিজ ও মার্কসবাদী অধ্যয়ন কেন্দ্র নামে তিনটি মার্কসবাদী সংস্থা “যুদ্ধ-বিরোধী সভা”র আয়োজন করে। সভার নেতারা যে বক্তব্য রাখছিল তার সার কথা হল, বর্তমানে কারগিলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও মুসলীম সন্ত্রাসবাদী জঙ্গিদের সঙ্গে ভারতীয় জওয়ানদের যে যুদ্ধ চলছে তা একটা সাজানো ব্যাপার মাত্র। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীঅটল বিহারী বাজপেয়ী ও পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের এক গোপন শলা-পরামর্শের ফল হল এই যুদ্ধ।

 তারা আরও বলতে থাকে যে, কাশ্মীরে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দেওয়া উচিত। কাশ্মীর পাকিস্তানেরই প্রাপ্য, তাই ভারত সরকারের উচিত কাশ্মীরকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়া। তারা আরও বলতে থাকে যে কাশ্মীরকে ধরে রাখতে যে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে তা নিছক অপচয় মাত্র। এই টাকা গরিবের ডাল-রুটি যোগান দেওয়ার জন্য খরচ করা উচিত। কাগজের রিপোর্ট অনুযায়ী বেলা ৪টা নাগাদ এক মহিলা নেত্রীর ভাষণ শুনে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। জনতার মধ্যে অনেকে চিৎকার করতে থাকে যে, এরা আই এস আই-এর চর। বেগতিক দেখে সংগঠনগুলির কর্মী ও নেতারা পালাতে থাকে এবং জনতা পিছু ধাওয়া করে তাদের ধরে ফেলে ও বেদম মারধোর করে। মহিলাকর্মীরাও রেহাই পায় না। এর আগে গত ৩রা জুলাই হাজরা পার্কে তারা অনুরূপ একটা সভা করে এবং বলে যে, অটল বিহারী বাজপেয়ী ও নওয়াজ শরীফ রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্যই এই যুদ্ধ লাগিয়েছে। নওয়াজ শরীফের উদ্দেশ্য হল পাকিস্তানে ভারত-বিরোধী জিগীর। তুলে তার নড়বড়ে আসন শক্ত করা এবং শ্রীবাজপেয়ীর উদ্দেশ্য হল, আগামী ১৩-তম লোকসভা নির্বাচনে সাধারণ মানুষের সমর্থন ও ভোট আদায় করা। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে, ১৯৪৭ সালে এই মার্কসবাদীরা একই কায়দায় মুসলমানদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করে এবং পাকিস্তান সৃষ্টিতে মদত যোগায়।

 যাই হোক, ১০ই জুলাইয়ের উপরিউক্ত ঘটনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে তা একটি অতিশয় মঙ্গলকর দিকের ইঙ্গিত দেয়। গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, দেশের জনসাধারণ কমিউনিস্টদের দেশদ্রোহী ও বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরী চরিত্র ধরে ফেলেছে। আর মঙ্গলকর কারণ এর দ্বারা স্পষ্ট হচ্ছে যে, বর্তমানে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে এক অভূতপূর্ব জাতীয়তাবাদী চেতনা ও দেশপ্রেম জাগ্রত হয়েছে এবং এই দেশাত্মবোধ ও জাতীয় জাগরণই ভারতবর্ষকে বিশ্বের দরবারে সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করবে। আর এটাও দিনের আলোর মতই পরিষ্কার যে, উদ্দেশ্যহীন ও দুর্নীতিবাজ কংগ্রেস সরকার বিগত ৫০ বছরে যা পারেনি, বর্তমান জাতীয়তাবাদী সরকার মাত্র ১৩ মাসের রাজত্বকালের মধ্যে তা পেরেছে। দেশের মানুষকে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছে তাদের মনে স্বাভিমান জাগ্রত করতে পেরেছে।

 এই দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী সরকার যখন গত ১৯৯৮ সালের ১১ই মে পোখরানে সফল পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করে তখন তাতে ভারতের প্রতিটি দেশভক্ত নাগরিকই গর্ব অনুভব করে। বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের মনেও এই ঘটনা গরিমা ও দেশপ্রেমের এক জোয়ার এনে দেয়। এই কারণেই ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক তাদের জন্য যে বিশেষ বণ্ড চালু করে