পাতা:মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তা কয়েক দিনের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু দেশের এই বিশ্বাসঘাতক কমিউনিস্টদের দল ঐ সাফল্যের ঘটনাকে নানাভাবে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতে থাকে। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় তারা হোর্ডিং দেয়, “পারমাণবিক না অমানবিক?” কিন্তু শুধু দেশের লোকই নয়, বিদেশের ভারতীয়রাও তাদের এই ঘৃণ্য প্রচারের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানায়। এই কারণেই, ঐ ঘটনার কিছুদিন পর আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তথা জবরদস্ত কমিউনিস্ট নেতা শ্রীজ্যোতি বসু লণ্ডনের ভারতীয়দের এক সভায় যখন পোখরানের ঘটনাকে নিন্দা করে ভাষণ দিতে শুরু করেন, তখন শ্রোতারা হৈ-হল্লা করে ও হাততালি দিয়ে সেই মির্জাফরি বক্তৃতা মাঝপথে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল, ভারত পারমাণবিক পরীক্ষা চালালে এদের কাছে তা অমানবিক, কিন্তু সেই একই পরীক্ষা চীন করলে তা সম্পূর্ণ মানবিক! ভারত পোখরানে মাত্র ৫টি পরীক্ষা চালিয়েছে, কিন্তু চীন পরীক্ষা করেছে ৪৫টি বোমা ও সোভিয়েট রাশিয়া পরীক্ষা করেছে ৭১৫টি বোমা এবং তখন তারা নীরব থেকে প্রচ্ছন্নভাবে তাকে সমর্থন করেছে।

 ঠিক একইভাবে, ভারতের বিজ্ঞানীরা যখন সফল মিসাইল উৎক্ষেপণ করেন তখন এই কমিউনিস্টরা তাকে ব্যঙ্গ ও উপহাস করে এবং বলে যে, ভারত যুদ্ধবাজ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একই পরীক্ষা যখন চীন করে তখন নীরবে তাকে সমর্থন ও প্রশংসা করে। তাই সব ঘটনা থেকে দেশের লোকের বুঝতে বাকি নেই যে বিশ্বাসঘাতকতা, দেশদ্রোহিতা ও মিথ্যা ভাষণের ক্ষেত্রে এই মার্কসবাদীরা সকলের অগ্রগণ্য। সম্প্রতি এই কমিউনিস্ট নেতারা এই মিথ্যা কথা বলে চলেছে যে, বর্তমানে ভারত এক আর্থিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলেছে এবং কারগিলের যুদ্ধই এই আর্থিক সঙ্কটের কারণ। অথচ প্রকৃত তথ্য বলছে যে, দ্রব্যমূল্যের বর্তমান বৃদ্ধির হার সব থেকে কম। খাদ্যশস্যের উৎপাদন ২০০ কোটি টনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে এবং তা সংরক্ষণ করার জন্য গুদামঘরের অভাব দেখা দিয়েছে। বিদেশী মুদ্রার ভাণ্ডার আছে প্রায় ২০০০ কোটি ডলার এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের তেজীভাব এত বেশি যে শেয়ার বাজারের সূচকাঙ্ক সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এর কোনোটাই অর্থনৈতিক সঙ্কট সূচিত করে না।

 দেশপ্রেম, দেশভক্তি, দেশাত্মবোধ ইত্যাদি শব্দগুলি মার্কসবাদী শাস্ত্রে অনুপস্থিত। তাই দেশমাতৃকার অঙ্গচ্ছেদ তাদের মনে বেদনার সৃষ্টি করে না এবং বলতে পারে “পাকিস্তানের দাবি মানতে হবে, তবেই ভারত স্বাধীন হবে।” বলতে পারে, তিনবিঘা বাংলাদেশকে দিয়ে দাও। আজাদ কাশ্মীর তো বটেই, পুরো কাশ্মীরটাই পাকিস্তানকে দিয়ে দাও। অথচ আশ্চর্যের ব্যাপার হল, দেশকে টুকরো টুকরো করে ফেলাই যাদের নীতি, সেই মার্কসবাদীরাই আওয়াজ তুলছে, “বি জে পি হটাও, দেশ বাঁচাও”। কিন্তু সুখের কথা হল এই যে, বাংলার মানুষ আজ বুঝে ফেলেছে যে, দেশকে বাঁচাতে হলে কাদের হঠানো দরকার। ১০ই জুলাইয়ের ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে।

 মার্কসবাদীদের ভ্রান্ত নীতি আজ তাদের এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, মূলায়ম সিং বা শারদ পাওয়ারের মত লোকও যে বিদেশিনী মহিলাকে পরিত্যাগ করেছে, আমাদের মাননীয় জ্যোতিবাবুর দল সেই মহিলাকে ভজনা করে চলেছেন। যেই কংগ্রেস দলকে বিগত লোকসভা নির্বাচনের সময়ও তারা যথেচ্ছ গালাগালি করেছেন, আজ ক্ষমতার লোভেই হোক আর অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই হোক, সেই কংগ্রেস ও সোনিয়া গান্ধীর কাছে তাঁরা আত্মসমর্পণ করেছেন। কিন্তু ডুবন্ত নৌকার নিয়ম একটাই— সে নিজেও ডোবে এবং যারা তাতে আরোহী হয় তারাও ডোবে।

রাধেশ্যাম ব্রহ্মচারী
২৭শে আষাঢ়, ১৪০৬ সন
৪৪/১, সাউথ রোড, কলকাতা-৭৫