পাতা:মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা

 অবশ্য এসব জানবার বা বুঝবার কোনো প্রয়োজন আছে বলেই তাঁরা মনে করেন না। কারণ এইসব গোঁড়া (fanatic), অর্ধশিক্ষিত ও বিকৃতবুদ্ধি মার্কসবাদীরা মনে করেন যে, পাশ্চাত্য থেকে সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের যে বড়ি তাঁরা নিয়ে এসেছেন তার থেকে ভাল আর কিছু হয় না বা হতে পারে না। যে কোনো রুগীকে এই অত্যাধুনিক দাওয়াই একবার খাওয়াতে পারলেই হল, সব রোগ নিমেষে আরোগ্য হয়ে যাবে। রুগীকে পরীক্ষা করার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই, শুধু সেই বড়ি তাকে গিলিয়ে দাও। তাই তাঁরা ভারতবর্ষের নাড়ী টিপে দেখারও প্রয়োজন মনে করলেন না এবং সেই বড়ি গেলাতে উদ্যত হলেন। কিন্তু সুখের কথা হল সেই বড়ি ভারতবর্ষকে দিয়ে গেলানো গেল না। ভারতবর্ষ তা বমি করে ফেলে দিল।

 তাই চীনেরও আগে এই ভারতবর্ষে কমিউনিস্ট পার্টি তার কাজকর্ম শুরু করা সত্ত্বেও আজ পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও কেরালা ছাড়া আর কোথাও মার্কসবাদকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ভারতের সুসভ্য মানুষ বর্বর মার্কসবাদী তত্ত্বকে সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে। যে তত্ত্ব শুধু মানুষের আহার-নিদ্রা আর মৈথুনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ সেই শিশ্নোদর তত্ত্বকে আধ্যাত্মিক ভারতবর্ষ যে জঞ্জালের মতই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে তাতে আর আশ্চর্য কি?

 এই সব মার্কসবাদীদের সম্বন্ধে বলতে গেলে মাইকেলের ভাষায় বলতে হয় “পরদেশে ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি....”। এঁরা জানেনই না যে আমাদের পূর্বপুরুষগণ কি সম্পদ আমাদের জন্য রেখে গেছেন বা এই ভারতবর্ষের ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করার ফলে উত্তরাধিকার সূত্রে কি অমূল্য সম্পদই না আমরা পেয়েছি। তা জানলে ভিক্ষুকের মত বিদেশ থেকে মার্কসবাদের তত্ত্ব ভিক্ষা করতে যেতেন না। ভারতবর্ষের এই বৌদ্ধিক সম্পদের সম্ভার সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে আমেরিকার প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ শ্রী উইল ডুরাণ্ট বলেন, “India is the motherland of our race, and Sanskrit is the mother of European languages. She was the mother of our philosophy-mother, through the Arabs, of much of our mathematics-mother through Buddha of the ideas embodied in christianity-mother, through village community of self government and democracy. Mother India is in many ways the mother of all.” সেই ভারতবর্ষের সন্তান ভিক্ষাপাত্র হাতে করে বিদেশ থেকে মার্কসবাদের মত একটি অপরিণত, অমার্জিত, বর্বর তত্ত্ব ভিক্ষা করে এনেছে এবং তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করছে—এর থেকে দুঃখের ও লজ্জার বিষয় আর কি হতে পারে।

 অবশ্য মার্কসবাদীরা যুক্তি দেখাবেন যে উপরিউক্ত সমস্ত ভারতীয় দর্শনই ভাববাদী এবং এরা শুধু বর্তমান জগৎকে ব্যাখ্যা করতে পারে, পরিবর্তন করতে পারে না। কিন্তু বুদ্ধিমান মার্কস এমন এক গূঢ় তত্ত্বের আমদানী করেছেন যা বস্তুবাদী, বৈজ্ঞানিক এবং জগৎকে পরিবর্তন করতে সক্ষম। বস্তু বলতে কি বোঝায় বা বস্তুর মূল কোথায় তার আধুনিক ব্যাখ্যা জানলে মার্কসবাদীদের পক্ষে বস্তুবাদী দর্শন নিয়ে লাফালাফি করা সম্ভব হত না, কারণ বস্তুর ঊনবিংশ শতাব্দীর সংজ্ঞাই তাদের জানা আছে। আর যে মার্কসবাদকে তাঁরা বৈজ্ঞানিক বলে আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ করে চলেছেন, সে সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে Bertrand Russel লিখেছেন এই বিশাল বিশ্বের মধ্যে “His (Marx's) perview is confined to this planet, and, within this planet, to man. No man who has failed to assimilate this fact has a right to call his philosophy scientific”. তিনি আরও লিখেছেন, “Broadly