পাতা:মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মার্কস ও মার্কসবাদীদের অজ্ঞতা

speaking, all the elements in Marx's philosophy, which are derived from Hegel, are unscientific in the sense that there is no reason to suppose them true.” (Chapter on Marx, History of Western philosophy)।

 মার্কসবাদী তত্ত্ব জগৎকে পরিবর্তন করতে পারে— একথা শুনলে মনে হবে যে মার্কসের তত্ত্ব বুঝি সূর্য-চন্দ্রের গতিপথকেও পরিবর্তিত করে দিতে পারে। কিন্তু তা নয়। মার্কসবাদী বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সীমা যেহেতু মনুষ্য সমাজ পর্যন্ত, তাই এই কথার মধ্য দিয়ে মনুষ্য সমাজের পরিবর্তনের কথাই বলা হয়ে থাকে। সমাজের সকল মানুষের স্বাধীনতা হরণ করে, সমগ্র দেশকে একটা জেলখানায় রূপান্তরিত করে, যে সমাজতান্ত্রিক পরিবর্তনের কথা মার্কসের তত্ত্ব প্রচার করে, ১৯৯১ সালে রাশিয়ার জনগণ তার সমুচিত জবাব দিয়েছে। রাশিয়ার সমাজতন্ত্রের নায়ক মহামতি লেনিনের মূর্তি তাঁরই প্রতিষ্ঠিত সমাজতন্ত্রের দ্বারা লালিত-পালিত মানুষ গাঁইতি-শাবল দিয়ে ভেঙেছে শুধু নয়, সেই ভগ্ন মূর্তিতে মলমূত্র ত্যাগ করেছে।

 এখানে আরও একটা কথা বলার আছে। মার্কসবাদীদের মতে মার্কসবাদ হল এক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং তাঁরা নিজেরা হলেন চরমভাবে বৈজ্ঞানিক মনোভাবাপন্ন। অবৈজ্ঞানিক সব কিছুই তাঁদের কাছে পরিত্যাজ এবং বৈজ্ঞানিক সব কিছুই তাঁদের আদরণীয়। এ হেন মার্কসবাদীরাই আবার বলেন যে, সংস্কৃত একটি মৃত ভাষা বা dead language, এবং তাই পরিত্যাজ্য। এ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সংস্কৃত যে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বৈজ্ঞানিক ভাষা, তা তাঁদের জানা নেই। তাই এটাও অনুমান করা চলে যে, ইংরাজী science শব্দ যে সংস্কৃত ছিদ্ ধাতু (অর্থ কাটা) থেকে এসেছে তাও তাঁদের জানা নেই। সংস্কৃত ছিদ্ থেকে ল্যাটিন sciendere (to split) এসেছে। কালক্রমে এই sciendere থেকে ফরাসী sciens ও scient এসেছে। শেষ পর্যন্ত ফরাসী sciens থেকে ইংরাজী science এসেছে। কাজেই ইংরাজী science-এর জননী সংস্কৃত ছিদ্‌।

 যাই হোক, উপরিউক্ত মার্কসবাদী সমাজ পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য হল ব্যক্তিগত মালিকানার অবসান। কিন্তু যেই চীনের সমাজতন্ত্রকে আমাদের মার্কসবাদীরা তাদের আদর্শস্থল ও প্রেরণার উৎস বলে বর্ণনা করেন, সেখানে কি অবস্থা? ছোট, মাঝারি ও বৃহৎ মিলিয়ে চীনে প্রায় ৩ লক্ষ সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল এবং সেগুলোতে প্রায় ২৫ কোটি শ্রমিক কাজ করত। গত ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পার্টি-কংগ্রেসে রাষ্ট্রপতি জিয়াং তাঁর পরিকল্পনা (Jiang's Plan) পেশ করেন। তাতে প্রস্তাব রাখা হয় যে, মাত্র ১০০০ সংস্থাকে সরকারি আওতায় রেখে বাদবাকিগুলোকে ব্যক্তিগত মালিকানায় তুলে দেওয়া হবে। বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করার জন্য জিয়াং-এর প্রতিদ্বন্দ্বী কিয়াও শী-কে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৯৮ সালে এই প্রাইভেটাইজেশনের কাজ শুরু হয়েছে যা ৫ বছর ধরে চলবে এবং এর ফলে ২ কোটি ৫০ লক্ষ শ্রমিক বেকার হবে। মার্কসীয় তত্ত্বের দ্বারা সমাজ পরিবর্তনের চিত্রটা যাতে আরও পরিষ্কার হয় তাই বর্তমান চীনের উপরিউক্ত উদাহরণটি দেওয়া গেল।


ভারতবর্ষ সম্পর্কে মার্কসের চূড়ান্ত অজ্ঞতা:

 কোনো একটি দেশকে জানতে গেলে সর্বপ্রথম সেই দেশের ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ু জানা আবশ্যক। মার্কস সারা জীবনে ভারতবর্ষ সম্বন্ধে সাকুল্যে দু’খানা প্রবন্ধ লিখেছেন, “ভারতে বৃটিশ শাসন” এবং “ভারতে বৃটিশ শাসনের ভবিষ্যৎ ফলাফল”। পরিশিষ্ট-১ এবং পরিশিষ্ট-২