পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
১০২
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

মস্‌জেদবাটীতে অনেকগুলি ফকীর বাস করিত, অতিথিশালার ব্যয়-লাঘব হওয়ায় ফকীরগণ ১৭৮৯ খ্রীঃ অব্দে ব্যয়বৃদ্ধির জন্য নিষ্ফল আবেদন করিয়াছিল; এক্ষণে স্থানটি প্রায় জনশূন্য।

 পূর্বে উল্লিখিত হইয়াছে, মোতিঝিলের পূর্ব তীরে কুমারপুর (কোঁয়ারপাড়া) নামক স্থানে রাধামাধব মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছেন। রাধামাধবের স্নানযাত্রা এতদঞ্চলে সুপ্রসিদ্ধ; সেই সময়ে কুমারপুরে একটি বৃহৎ মেলা হইয়া থাকে। খ্রীস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে অথবা সপ্তদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বৈষ্ণবচূড়ামণি পূজ্যপাদ জীবগোস্বামীর শিষ্য হরিপ্রিয়া ঠাকুরাণী বৃন্দাবন হইতে কুমারপুরে আসিয়া ৺রাধামাধবের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।[১] সম্ভবতঃ সে সময়ে মোতিঝিল ভাগীরথীর গর্ভস্থ ছিল। রাধামাধবের অনেকগুলি দলিলপত্র তাঁহার বর্তমান সেবকের নিকট রহিয়াছে।[২] একখানি বাদশাহী ফারমান ছিন্ন অবস্থায় আজিও বর্তমান আছে। নবাব মহবৎ জঙ্গের (আলিবর্দীর) মৃত্যুর পর রাধামাধবের কতক ভূমি খাসমহালের গোমস্ত কর্তৃক বেদখল হওয়ায়, পরবতী নবাব (সম্ভবতঃ সিরাজউদ্দৌলা) তৎকালীন সেবক রূপনারায়ণ গোস্বামীকে তৎসমুদায় প্রত্যর্পণ করিতে অনুমতি দেন। রূপনারায়ণ হরিপ্রিয়া হইতে পঞ্চম সেবক। হরিপ্রিয়ার কৃত অতিথিশালার ভগ্নাবশেষ অদ্যাপি বিদ্যমান আছে। একটি একাকিনী মাধবীলতা বহুকাল হইতে আজিও জঙ্গলমধ্যে আপনার অস্তিত্ব রক্ষা করিতেছে। এই মন্দিরের সহিত মোতিঝিলের প্রাসাদের সম্বন্ধ ছিল; আমরা এতদুপলক্ষে দুই-একটি গল্পের উল্লেখ করিতেছি।

 এক্রাম উদ্দৌলার শোকে বিপ্রকৃতিস্থ হইয়া নওয়াজেস্‌ মহম্মদ খাঁ যৎকালে শান্তিকামনায় মোতিঝিলের প্রাসাদে বাস করিতেন, সেই সময়ে তিনি প্রতিনিয়ত মন্দিরের শঙ্খঘন্টার শব্দে বিরক্ত হইয়া স্বীয় অনুচরদিগকে গোস্বামীর নিকট খানা পাঠাইতে বলেন।[৩] তিনি ভাবিয়াছিলেন, বলপূর্বক তাহাদিগকে বিদূরিত না করিয়া, এইরূপ কৌশল অবলম্বন করিলে, তাঁহারা চলিয়া যাইতে বাধ্য হইবে। খানা তদানীন্তন গোস্বামীর নিকট উপস্থিত হইলে, গোস্বামী তাহার আবরণ উন্মোচন করিতে বলিলেন; আবরণ উন্মোচন করিয়া দেখা হইল যে, তাহা যূ’ই ফুলের মালা হইয়াছে। নওয়াজেস্‌

  1. রাধামাধবের সেবক রাইমোহন গোস্বামী বলেন যে, হরিপ্রিয়া ঠাকুরাণী কুমারপুরে প্রথম আগমন করিয়াছিলেন। হরিপ্রিয়ার সেবাধিকারী বংশীবদন গোস্বামীর প্রথম আগমনের কথাও কাহারও কাহারও মুখে শুনিতে পাওয়া যায়। হরিপ্রিয়া হইতে রাইমোহন একাদশ সেবক। ইঁহারা বঙ্গজ কায়স্থ ঘোষবংশসম্ভূত। রাধামাধবের সেবকগণের বিবাহ নিষিদ্ধ।
  2. আমরা বাঙ্গলা ১০৯৯, ১১০৪, ১১১৫, ১১২০, ১১৫৪, ১১৯৩ প্রভৃতি সালের দলিল দেখিয়াছি। বাদশাহী ফারমান ও অন্যান্য কাগজপত্রও দেখিয়াছি।
  3. রাধামাধবের সেবকগণ বলিয়া থাকেন, যে “পাগলা নবাব” সিংদালান নির্মাণ করেন, তিনিই এইরূপ খানা পাঠাইয়াছিলেন। সিংদালান নওয়াজেস্‌ মহম্মদ খাঁ কর্তৃক নির্মিত হয়, এবং এক্রাম উদ্দৌলার মৃত্যুর পর তিনি বিপ্রকৃতিস্থ হইয়াছিলেন, এইজন্য আমরা এখানে