পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

কাশীমবাজার

নেমিনাথের মন্দির

 বাঙ্গলার প্রসিদ্ধ বন্দর সপ্তগ্রামের ধ্বংসের পর যৎকালে কলিকাতার অভ্যুদয় সুদূর ভবিষ্যদ্‌গর্ভে অন্তর্নিহিত ছিল, সেই সময়ে কাশীমবাজার নিম্নবঙ্গে বাণিজ্যবিষয়ে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করে। মুর্শিদাবাদ বাঙ্গলার রাজধানী হওয়ায় পূর্ব হইতে কাশীমবাজারের নাম পাশ্চাত্য জগতে বিঘোষিত হয়। ইহাতে এবং ইহার নিকটস্থ অনেক স্থানে প্রধান প্রধান ইউরোপীয় জাতির কুঠী সংস্থাপিত ছিল। তন্মধ্যে কাশীমবাজারে ইংরেজদিগের, কালিকাপুরে ওলন্দাজদিগের, শ্বেতাখাঁর-বাজারে আর্মেনীয়দিগের ও সৈয়দাবাদ-ফরাসডাঙ্গায় ফরাসীদিগের চিহ্ন অদ্যাপি দেখিতে পাওয়া যায়। কাশীমবাজার ও কালিকাপুরে ইংরেজ ও ওলন্দাজদিগের এক-একটি সমাধিক্ষেত্র এবং শ্বেতাখাঁর-বাজারে আর্মেনীয়দিগের একটি উপাসনামন্দির অদ্যাপি বিদ্যমান রহিয়াছে। কাশীমবাজার-সমাধিক্ষেত্রে ভারতবর্ষের প্রথম গবর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রথম পত্নী মেরী ও শিশু কন্যা এলিজাবেথের সমাধি আছে। আর্মেনীয়দিগের উপাসনা মন্দিরে তাহার নির্মাণাব্দ ১৭৫৮ খ্রীঃ অব্দ লিখিত রহিয়াছে।[১] ফরাসীদিগের নির্মিত ফরাসডাঙ্গার প্রসিদ্ধ বাঁধের ভগ্নাবশেষ[২] আজিও ভাগীরথীর স্রোত প্রতিহত করিয়া, সমস্ত নগরকে রক্ষা করিতেছে; কিন্তু এক্ষণে তাহা মৃত্তিকামধ্যে প্রোথিত হইয়া পড়িয়াছে। ফরাসডাঙ্গায় কিছুকাল কূটনীতি-বিশারদ ডিউপ্লে বাস করিয়াছিলেন। সিরাজউদ্দৌলার সময় ‘ল’ সাহেব এইখানে অধ্যক্ষতা করিতেন; সিরাজের সহিত তাঁহার সবিশেষ পরিচয় ছিল। কাশীমবাজারের ইংরেজ কুঠী বা রেসিডেন্সীর চাতালের সামান্য অংশ ব্যতীত অন্য কোন চিহ্নই বর্তমান নাই। তৎকালে ভাগীরথী এই সকল স্থানের নিম্ন দিয়া প্রবাহিত হইতেন; কিন্তু তাঁহার গতি বক্র হওয়ায় কাশীমবাজার হইতে মুর্শিদাবাদে যাইতে অনেক সময় লাগিত। হলওয়েল সাহেব লিখিয়াছেন যে, অন্ধকূপ হত্যার পর যখন তাঁহাকে কলিকাতা হইতে বন্দী-অবস্থায় মুর্শিদাবাদে আনয়ন করা হয়, তখন তিনি প্রাতঃকালে সৈয়দাবাদ-

  1. শ্বেতাখাঁর বাজারের গির্জা কাহারও কাহারও মতে খাজা মাইনাস এবং কাহারও কাহারও মতে পিটার আরাটুন-কর্তৃক নির্মিত হয়। গির্জা মেরীর নামে উংসর্গীকৃত করা হইয়াছিল। ১৬৪৫ খ্রীঃ অব্দে আর্মেনীয়গণ দিনেমারদিগের সহিত মিলিত হন। ইহার ২০ বৎসর পরে আরঙ্গজেবের দরবার হইতে আর্মেনীয়গণ সৈয়দাবাদে এক খণ্ড ভূমির সনন্দ প্রাপ্ত হন এবং তথায় একটি গির্জা নির্মাণ করেন। সেই গির্জাই এতদ্দেশে প্রথম আর্মেনীয় গির্জা (Calcutta Review, January 1894)। ১৭৫৮ খ্রীঃ অব্দের গির্জা প্রথম নিমিত গির্জার পূর্বদিকে নির্মিত হইয়াছিল।
  2. কেহ কেহ উক্ত ভগ্নাংশকে ফরাসডাঙ্গার সেতুর অংশ বলিয়া থাকেন; কিন্তু সে কথা অনেকের মতে ঠিক নহে।