পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
বড়নগর
১৮৩

দেখিয়া চমৎকৃত হইয়া থাকেন। ইহার প্রত্যেক ইষ্টক কারুকার্যময়, নানাবিধ দেব দেবীর মূতিখোদিত ছাচে মৃত্তিকাবিন্যাস করিয়া এই সকল ইষ্টক নিমিত হইয়াছে। এই সকল ইষ্টকে কোন স্থানে দশাবতার, কোন স্থানে দশমহাবিদ্যা, কোথাও রাম-রাবণের যুদ্ধ, কোথাও শুম্ভ-নিশুম্ভের যুদ্ধ, এতদ্ভিন্ন রাধাকৃষ্ণ, অসংখ্য শিব ও দেবমূতি চতুদিকে অঙ্কিত রহিয়াছে। এই সকল মন্দির দেখিলে, পুরাতন শিল্পের ও তৎকালীন লোকদিগেরও স্বধর্মভক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। মুশিদাবাদের মধ্যে ইহা একটি দর্শনীয় পদার্থ। চারিদিকে চারিখানি বাঙ্গল বা মন্দির অবস্থিত। প্রত্যেক মন্দিরে তিনটি করিয়া শিব আছেন। বলা বাহুল্য, এই মন্দিরও রানী ভবানীরই প্রতিষ্ঠিত।

 চারি বাঙ্গলার সম্মুখে ভাগীরথীতীরে কতিপয় অশ্বথ ও বটবৃক্ষ শাখা প্রসারণ করিয়া একটি ছায়া-নিকেতনের সৃষ্টি করিয়াছে। তাহদের ছায়াদ্বারা অর্ধভাগীরথী আবৃত। ইহাদের ছায়াতলে উপবেশন করিলে, মনে পরম শান্তভাবের অভু্যুদয় হইয়া থাকে। এইখানে বসিয়া ভাগীরথীর সলিলোচ্ছ্বাস দর্শনে ও রানী ভবানীর পুণ্যকীতি স্মরণে যখন মন পবিত্রভাবে ভরিয়া যায়, তখন দর্শকমাত্রেরই বড়নগরকে প্রকৃত তীর্থস্থান বলিয়াই বোধ হয়।

 চারি বাঙ্গলার উত্তরে রাজা বিশ্বনাথের অসম্পূর্ণ হস্তুপরগণার কাছারি। রাজ সাতটি পরগণার জমিদারীকার্য নির্বাহের জন্য কাছারিটি নির্মাণ করিতেছিলেন; কিন্তু তাহ সম্পূর্ণ করিতে পারেন নাই। এক্ষণে তাহ জঙ্গলসমাবৃত হইয়া ভগ্নদশায় পতিত হইয়াছে।

 এই সমস্ত মন্দিরের চারিপাশে রাজবাটী ছিল। রাজবাটীর দক্ষিণ দিকের পরিখার চিহ্ন অদ্যপি দেখিতে পাওয়া যায়। এই পরিখার সহিত একটি ক্ষুদ্র খালের সংযোগ ছিল বলিয়া কথিত আছে। এই পরিখা ও সেই খাল দিয়া প্রতিরাত্রি তরণী আরোহণে রাজা রামকৃষ্ণ সাধনার্থ কিরীটেশ্বরী গমন করিতেন। ভবানীশ্বর ও গোপালমন্দিরের উত্তর দিকে রাজবাটীর চিহ্ন অদ্যাপি বিদ্যমান রহিয়াছে। তাহার অধিকাংশই ভগ্নস্তুপে পরিণত; কিয়দংশ সংস্কৃত করিয়া বড়নগরের বর্তমান কুমার বাস করিতেছেন। তাহার মধ্যে একটি পূর্বদ্বার ঘরের নীচের তলায় রানী ভবানী বাস করিতেন। সেই পবিত্র গৃহ বিদ্যমান থাকিয়া আজিও রাজসংসারের পবিত্রতা রক্ষা করিতেছে। গৃহের বারান্দায় একটি ফোয়ারার হ্রদ আছে। এই বর্তমান রাজবাটীর দক্ষিণে দেওয়ানখান। তাহার দক্ষিণে রানী ভবানীর ব্রাহ্মণভোজনের বাট ছিল; তথায় তিনি স্বহস্তে ব্রাহ্মণভোজন করাইতেন।

 বর্তমান রাজবার্ট হইতে কিছুদূরে উত্তর দিকে অষ্টভূজ গণেশের মন্দির। ইনিই বড়নগরের গ্রাম্যদেবতা বলিয়া প্রসিদ্ধ। ইহার মূতিটি অতীব রমণীয়। গণেশের মূতি পাষাণময়ী। মন্দিরমধ্যে একটি ক্ষুদ্র কালীমূতি আছেন। প্রবাদ আছে,