পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২০৮
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

নন্দকুমারের নিকট সরকারের প্রায় ৮০ হাজার টাকা পাওনা হয়। নন্দকুমারের শযুগণ মনে করিতে পারেন যে, নন্দকুমার উক্ত টাকা আত্মসাৎ করিয়াছিলেন। কিন্তু বাস্তবিক নন্দকুমার তাহ করেন নাই। রাজস্ববিষয়ে কার্য করতে গেলে, যেরূপ প্রভু ও কর্মচারীর মধ্যে দেনাপাওনা হয়, নন্দকুমারের নিকট সেরূপই পাওনা হইয়াছিল। তৎকালে ইহার অনেক দৃষ্টান্ত দেখা যাইত; অনেক কর্মচারীর নিকট মৃত্যুসময় পর্যন্ত টাকা পাওনা থাকিত। বাঙ্গলার রাজস্ববিভাগের প্রধান কাননগো বঙ্গাধিকারিগণের ফার্মানে আমরা ইহার প্রমাণ দেখিতে পাই। কোন বঙ্গাধিকারী প্রধান কাননগো পদে নিযুক্ত হওয়ার সময় যে ফার্মান বা নিয়োগপত্র প্রাপ্ত হইতেন, তাহার পূর্বে তাঁহাকে তাহার পূর্বপুরুষগণের নিকট প্রাপ্য সমস্ত সরকারী অর্থ পরিশোধ করিতে হইত। পরে তাহারা আপনার নিয়োগসম্বন্ধে নজর দিয়া উক্ত ফার্মান প্রাপ্ত হইতেন। সুতরাং রাজস্ববিভাগের কার্য করিতে গেলে, এরূপ দেনাপাওনা নিকাশের পূর্ব পর্যন্ত প্রায়ই থাকিয়া যায়। বর্তমান সময়েও এইরূপ দৃষ্টান্তের অভাব নাই।

 নন্দকুমারের নামে অভিযোগ উপস্থিত হইলে, চায়েন রায় আর তাঁহাকে উক্ত পদে রাখিতে ইচ্ছা করেন নাই। তিনি নন্দকুমারকে মুশিদাবাদে আহবান করিয়া তাহার নিকট হইতে সরকারের প্রাপ্য টাকার জন্য অত্যন্ত পীড়াপীড়ি করিতে থাকেন। সহসা রাজস্ববিভাগের কার্য হইতে অপসৃত হইলে, অর্থ সংগ্রহ করা হয় না; এই জন্য নন্দকুমারকে অত্যন্ত কষ্টে পতিত হইতে হয়। রায়রায়ানও তাঁহার প্রতি অযথা অত্যাচার আরম্ভ করিয়াছিলেন। পুত্রের দুরবস্থার কথা শুনিয়া পদ্মনাভ নিজে সমস্ত অর্থ পরিশোধ করিয়া নন্দকুমারকে লাঞ্ছনা হইতে অব্যাহতি প্রদান করেন। নন্দকুমারের শত্রুপক্ষীয়ের বলিয়া থাকেন, পদ্মনাভ সেই সময়ে নন্দকুমারের প্রতি এতদূর বিরক্ত হইয়াছিলেন যে, তদবধি আর তাঁহার মুখদর্শন করিতেন না।” এ কথার কোন মূল্য আছে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস হয় না। কারণ যে পদ্মনাভ নিজেই রাজস্ববিভাগে কার্য করিতেন, তিনি কি জানিতেন না যে, রাজস্ববিভাগের কার্য করিতে গেলে, প্রভুর নিকট দেনাপাওনা প্রায়ই ঘটিয়া থাকে। হয়তো অনেক সময়ে তাহার নিজের নিকট সরকারী অর্থ পাওনা হইয়াছিল। পুত্রের নিকট সরকারের অর্থ পাওনা ছিল বলিয়া তিনি পুত্রের মুখদর্শন করিতেন না, ইহা যাঁহাদের ইচ্ছা হয় বিশ্বাস করিতে পারেন, আমরা কিন্তু কিছুতেই বিশ্বাস করিতে পারি না।

  নন্দকুমার কার্য হইতে অপসৃত হইয়া, নবাব শী আমেদ জঙ্গের নায়েব হোসেন কুলী খাঁর নিকট কার্যপ্রার্থনায় উপস্থিত হন। রায়রায়ান নন্দকুমারের প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়ায়, তিনি তাঁহার বিরুদ্ধে হোসেন কুলী খাঁকে লিখিয়া পাঠাইলে, হোসেন কুলী খা ঁতাহাকে কার্য প্রদান করিতে অসম্মত হন। তাহার পর তিনি আলিবর্দী খাঁর প্রধান সেনাপতি মস্তাফা খাঁর নিকট প্রায়ই যাতায়াত করিতেন। এই সময়ে মস্তাফ

৫ Barwell's letter to his sister