পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নলকুমার
২১৭


নলকুমার নায়েব দেওয়ানী ও রাজারাম সিংহ আপনার পূর্বপদের প্রার্থনা করেন। কিন্তু কিছুদিন পরে রাজা দুর্লভরামের সহিত নন্দকুমারের সৌহার্দ কিঞ্চিৎ শিথিল হয়। কেহ কেহ বলিয়া থাকেন যে, নন্দকুমার স্বীয় পুত্র গুরুদাসের জন্য কাননগো পদের প্রার্থী হইয়াছিলেন বলিয়া রাজা দুর্লভরাম তাহার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।** রাজা দুর্লভরামের এরূপ অসন্তোষের কারণ কি, তাহা আমরা বুঝিতে পারি না। নন্দকুমার স্বীয় পুত্রের জন্য পদপ্রার্থী হইলে, দুর্লভরামের বিরক্ত হইবার বিশেষ কোন কারণ দেখা যায় না।

 পূর্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, নন্দকুমার কোম্পানী-কর্তৃক বর্ধমান প্রভৃতির রাজস্বসংগ্রহের ভারপ্রাপ্ত হন এবং তাহা লইয়াই হেস্টিংসের সহিত র্তাহার বিবাদ আরম্ভ হয়। নদীয়ার রাজস্ব অনেক দিন হইতে পাওনা ছিল। এজন্য নন্দকুমার রাজাকে বলিয়া পাঠাইলেন যে, কোম্পানীর প্রাপ্য রাজস্ব নিরূপিত সময়ের মধ্যে প্রদান না করিলে, তাহাকে বন্দী-অবস্থায় থাকিতে হইবে। রাজা ভীত হইয়৷ কলিকাতায় আসিয়া ইংরেজদেগের শরণাপন্ন হইলেন এবং কোন রূপে রাজস্বের বন্দোবস্ত করিয়া নিষ্কৃতি লাভ করিলেন। নন্দকুমার এই সময়ে বর্ধমানরাজের নিকটও খাজনার জন্য পিয়াদা প্রেরণ করেন এবং কলিকাতায় আসিয়া তাহার দেয় রাজস্ব মাসে মাসে বন্দোবস্ত করিবার জন্য লিখিয়া পাঠাইলেন। প্রথমে এইরূপ কথা হয় যে, বর্ধমান ও নদীয়ার খাজনা মুশিদাবাদের রাজকোষে জমা হইয়া, পরে তথা হইতে কলিকাতায় ইংরেজদেগের নিকট প্রেরিত হইবে। কিন্তু পরে কলিকাতা কাউন্সিলের সভোরা স্থির করিলেন যে, তাহাতে অসুবিধা ঘটিবে। সুতরাং তাহারা উক্ত প্রদেশদ্বয়ের রাজস্ব আদায়ের জন্য একজন লোকের প্রয়োজন বোধ করেন। ক্লাইবের অনুরোধে নন্দকুমারকে উক্ত পদ প্রদত্ত হয়। নন্দকুমার হুগলী আসিয়া উক্ত প্রদেশদ্বয়ের খাজনা আদায়ের অনুমতি প্রাপ্ত হন এবং তজ্জন্য র্তাহাকে একটি খেলাতও প্রদত্ত হয়।

  নন্দকুমার বর্ধমানরাজের নিকট খাজনা চাহিয়া পাঠাইলে, তিনি মুশিদাবাদে সংবাদ প্রেরণ করেন। তৎকালে হেস্টিংসসাহেব মুর্শিদাবাদে রেসিডেন্টের পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি বর্ধমানরাজের পত্র পাইয়া নন্দকুমারের উপর বিরক্ত হন। এই সময়ে নন্দকুমারও হেস্টিংসকে র্তাহার নিয়োগ ও খেলাতপ্রাপ্তির কথা লিখিয়া পাঠান। হেস্টিংসের নিজের হন্ত দিয়া সে টাকা কলিকাতায় প্রেরিত না হওয়ায়, তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইয় উঠেন। তাহার হস্ত দিয়া কোম্পানীর টাকা প্রেরিত হইলে, তাহার যে অনেকবৃপ সুবিধা হয়, ইহা বোধ করি আর স্পষ্ট করিয়া উল্লেখ করিতে হইবে না; এবং নন্দকুমারকে সেই সুবিধার অন্তরায় হইতে দেখিয়া, নন্দকুমারের প্রতি হেস্টিংসের অসন্তোষের বীজ রোপিত হয়; সেই বীজ কুমে বধিত হইয়া মহান বৃক্ষে পরিণত হইয়াছিল। হেস্টিংস বর্ধমানরাজের ও নন্দকুমারের

 ১৫ Barwell's letter.