বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২২৩
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী
২২৩

মহারাজ নন্দকুমার ২২৩ অম্প ছিল না। এই অর্থের জন্য রাজা দুর্লভরাম ও শেঠদিগের সহিত র্তাহার বিবাদ উপস্থিত হয় । সুতরাং জমিদারদিগকে বিনা কারণে অব্যাহতি দিলে, তিনি নন্দকুমারের প্রতি যে সস্তুষ্ট থাকিতেন, এ কথা আমরা কিছুতেই বিশ্বাস করিতে পারি না । ইহার প্রধান কারণ এই যে, জমিদার ও প্রজাগণ মীর কাসেমের করভারে প্রপীড়িত এবং ১৭৬৩ খ্রীঃ অব্দের ঘোর বিপ্লবে অভিভূত হওয়ায়, নন্দকুমার করভারের লাঘব করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। র্তাহার পর মহম্মদ রেজা খাঁও দেওয়ানীর প্রথম বৎসরে করভারের লাঘব করিয়াছিলেন।১৯ সুতরাং নন্দকুমারের প্রতি দোষারোপ যে র্তাহার শত্রুপক্ষের বিদ্বেষপ্রসূত তাহাতে সন্দেহ নাই । নন্দকুমারের প্রতি মীরজাফরের ১৯ আমরা নিম্নে মীর কাসেম, নন্দকুমার ও মহম্মদ রেজা খাঁর বন্দোবস্ত ও আদায়অনাদায়ের এক তালিকা প্রদান করিতেছি ঃ “Statement Gross Collection Balance B. years Settlement 1169–A. D. 1762-3 2,41,18,912 6456,198 1,76,62,713 Cossim Ali 1170–1763-4 1,77,04,766 76,18,407 1,00,86,358 Nund Comar 1171–1764-5 1,76,97,678 81,75,53 95.22,144 Ditto 1172–1765-6 Mahd. Reza 1,60,29,011 1,4704,875 13,24,135” Khan (5th Report). উপরি উক্ত তালিকা হইতে বেশ বুঝা যায় যে, মীর কাসেমের সময় রাজস্ব বন্দোবস্ত অধিক পরিমাণে হওয়ায় পরবর্তী কালে ক্ৰমে তাহার লাঘব করিতে হইয়াছিল। এইরূপ লঘুকরণের জন্য যদি নন্দকুমার অপরাধী হন, তাহা হইলে কোম্পানীর রাজস্ব বন্দোবস্তকারী রেজা খাঁ যে আরও দোষী হইবেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু বাস্তবিক নন্দকুমার বা রেজা খাঁ দোষী নহেন। তাহারা জমিদার ও প্রজার অবস্থা বুঝিয়াই পূর্বাপেক্ষা লঘুপরিমাণে রাজস্ব বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন। অবশ্য নন্দকুমার অপেক্ষ রেজা খাঁ অধিক পরিমাণে রাজস্ব আদায় করিয়াছিলেন সত্য, কিন্তু তজ্জন্য তিনি যে নন্দকুমার অপেক্ষা উক্ত বিষয়ে বিশেষরূপ পারদর্শী ছিলেন, তাহ বিবেচনা করার কারণ নাই। কারণ, ১৭৬৩ খ্রীঃ অব্দের ঘোরতর বিপ্লবের পরই নন্দকুমারকে বাজস্ব আদায়ে প্রবৃত্ত হইতে হয়। রেজা খাঁ তাহার দুই বৎসর পরে দেশের শান্তির অবস্থায় বনেদাবস্তের ভার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন । তথাপি কোম্পানীর আদেশানুসারে তিনি জমিদার ও প্ৰজাগণের নিকট রাজস্ব আদায়ের জন্য পীড়াপীড়ি করায়, ভবিষ্যতে তাহার ফলে বঙ্গদেশে ছিয়াত্তরে মন্বন্তর ঘটিয়াছিল। কোম্পানীর আমলে রাজস্ব আদায়ের কঠোরতা যে ছিয়াত্তরের মন্ধস্তরের অন্যতম কারণ, তাহ নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকমাত্রেই স্বীকার করিয়া থাকেন। সুতরাং মীর কাসেম ও রেজা খাঁর বন্দোবস্তের মধ্যবর্তী বন্দোবস্তই যে কল্যাণকর হইয়াছিল, তাহা অস্বীকার করার উপায় নাই ।