পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৪০
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী


করেন, তাহাতে র্তাহার জাতি যাইবে না, কিন্তু প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে।৩৩ পণ্ডিতদিগের এইরূপ অদ্ভুত ব্যবস্থায় নন্দকুমারকে কারাযন্ত্রণাই ভোগ করিতে হইল। তিনি জামিনে নিষ্কৃতি পাইলেন না। হায়! বঙ্গদেশে চিরকালই কি ‘পলিটিকাল পণ্ডিত' পাওয়া যাইত? নন্দকুমারের কারাবাসে ও মিথ্যা মোকৰ্দমায় ক্লেভারিং, মন্সন ও ফ্রান্সিস অত্যন্ত বিচলিত হইলেন। নন্দকুমার, ফাউক প্রভৃতির নামে মোকৰ্দমা উপস্থিত হইলে, তাঁহারা নন্দকুমারের বাটীতে গমন করিয়া তাঁহাকে একবার উৎসাহিত করিয়া আসেন। এদিকে জজদিগের সহিত যোগ দিয়া হেস্টিংস নন্দকুমারের সর্বনাশে প্রবৃত্ত হইলেন। পূর্বে বলা হইয়াছে যে, ষড়যন্ত্রের মোকৰ্দমার প্রাথমিক অনুসন্ধান হইতেছিল। জাল-করা অভিযোগ উপস্থিত হইলে, তাহার পরবর্তী দাওরায় ষড়যন্ত্রের মোকৰ্দমার পূর্বেই জাল-করা মোকৰ্দমার দিন পড়িল। ধন্য ন্যায়পর ব্রিটিশ বিচারকগণ! তোমরা হেস্টিংসের জন্য বিচারালয়ের নিয়ম পর্যন্তও লঙ্ঘন করিতে ত্রুটি কর নাই।

 ১৭৭৫ খ্রী অব্দের ৮ই জুন হইতে কলিকাতার সুপ্রীমকোর্টে মহারাজ নন্দকুমারের জাল-করা অভিযোগের বিচার আরম্ভ হয়। ৯ই জুন এডওয়ার্ড স্কট, রবার্ট ম্যাকফালিন, টমাস স্মিথ, এডওয়ার্ড এলারিংটন, যোসেফ বার্নার্ড স্মিথ, জন রবিন্সন, জন ফাগুসন, আর্থার আডি, জন কলিস, সামুয়েল টাউচেট, এডওয়ার্ড সাটারথোয়েট এবং চার্লস ওয়েস্টন এই দ্বাদশ জন জুরী স্থির হন। র্তাহাদের মধ্যে জন রবিন্সনকে জুরীপতি নির্বাচিত করা হয়। সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতি ইম্পেসাহেব চেম্বার্স, হাইড ও লেমস্টেয়ার জজত্ৰয়ের সহিত জুরাদিগকে লইয়া বিচারে প্রবৃত্ত হইলেন। পূর্বোল্লিখিত ইলিয়টসাহেব দ্বিভাষীর কার্যে নিযুক্ত হন। নন্দকুমারের পক্ষে জারেট আটন ও ফারার কোন্সিলি নিযুক্ত হইয়া যথারীতি মোকৰ্দমা চালাইতে লাগিলেন। পূর্বে বলা হইয়াছে যে, এ অভিযোগে স্বয়ং সরকার বা ইংলণ্ডাধিপ ফরিয়াদী। বিচার প্রথানুযায়ী অন্যান্য কার্যের পর ফরিয়াদী পক্ষের সাক্ষীর জবানবন্দী গৃহীত হইল। প্রাসঙ্গিক (Formal) সাক্ষীদের কথা ছাড়িয়া দিলে, ফরিয়াদীর পক্ষ হইতে কমলউদ্দীন, তাহার ভূত্য হোসেন আলি, খাজা পিয়ুস, সদরউদ্দীন, মোহনপ্রসাদ, নবকৃষ্ণ, সহবৎ পাঠক এবং কৃষ্ণজীবন দাস এই আটজন প্রধান সাক্ষীকে উপস্থিত করা হয়। ফরিয়াদী পক্ষ হইতে এরূপ প্রমাণ করিতে চেষ্টা করা হয় যে, বুলাকাঁদাসের অঙ্গীকারপত্রে যে তিনজন সাক্ষী ছিল, তাহদের মধ্যে শীলাবতের মৃত্যু হইয়াছে, মাতাব রায় নামে কোন লোকই ছিল না ও মহম্মদ কমল, কমলউদ্দীন খাঁ ব্যতীত আর কেহই নহে। আসামী পক্ষ হইতে প্রমাণ করিতে চেষ্টা করা হয় যে, অঙ্গীকার-পত্রের তিনজন সাক্ষীরই মৃত্যু ঘটিয়াছে। আমরা এই সাক্ষীদিগের মধ্য হইতে দুই চারিজনের সাক্ষ্যের সংক্ষিপ্ত মর্ম প্রদান করিতেছি।

 ৩৩ Selection from State Papers (Forest), Vol. II, pp. 376-77 -