পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৪৮
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

ফ্যারারসাহেব জুরাদিগকে লক্ষ্য করিয়া কিছু বলিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন। ইংলওীঁয় আইনে গুরুতর অপরাধীদিগের কোন্সিলি আইনসংক্রান্ত কোন কথা ব্যতীত আর কিছু বলিতে পারেন না বলিয়া তাহার আবেদন অগ্রাহ্য করা হয়। কিন্তু জজসাহেবের ইচ্ছা করিলে, স্বয়ং মহারাজ নন্দকুমারকে কিছু বলিবার জন্য আদেশ দিতে পারিতেন; তাঁহাকে সে সুযোগ প্রদান করাও হয় নাই। তাহার পর ইম্পেসাহেব জুরাদিগকে লক্ষ্য করিয়া বলিতে আরম্ভ করিলেন। তিনি মোহনপ্রসাদ, কমলউদ্দীন, নবকৃষ্ণ প্রভৃতি ফরিয়াদীপক্ষের সাক্ষীদিগের কথাগুলি বিশ্বাস করিবার জন্য, সেগুলিকে বিশদরূপ ব্যাখ্যা করেন। যদিও বিচারপতির নিয়মানুসারে সাক্ষীদিগের কথায় বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করিবার জন্য তিনি সমস্তই জুরীদিগের উপর নির্ভর করিয়াছিলেন, তথাপি তাঁহার বলিবার ভঙ্গিতে ফরিয়াদীপক্ষের সাক্ষীতে বিশ্বাস এবং আসামীপক্ষের সাক্ষীতে অবিশ্বাস করার কথা জুরীরা বুঝিয়া লইয়াছিলেন। অতঃপর জুরীরা প্রায় একঘণ্টা পরামর্শ করিয়া মহারাজ নন্দকুমারকে দোষী বলিয়াই প্রকাশ করিলেন। তজ্জন্য তৎকালের নিয়মানুসারে ১৬ই জুন মহারাজ নন্দকুমারের প্রাণদণ্ডের আদেশ প্রদান করা হয়।

  প্রাণদণ্ডের আদেশ প্রদত্ত হইলে, মহারাজ নন্দকুমারকে কারাগারের আশ্রয় গ্রহণ করিতে হইল। কারাগারের একটি দ্বিতল গৃহ তাহার আবাসস্থানরূপে নিদিষ্ট হইয়াছিল। সে গৃহে আর কেহ থাকিত না; তথায় মহারাজ বন্ধুবান্ধবগণের সহিত কথোপকথনে ও শাস্ত্রালাপে মৃত্যু-সময় পর্যন্ত অতিবাহিত করিয়াছিলেন। প্রাণদণ্ডাজ্ঞার পর দ্বাবিংশতি দিবস তিনি পাপময়ী পৃথিবীতে অবস্থান করিতে পারিয়াছিলেন। সেই কয় দিবস তাহার হৃদয়মধ্যে যে কিরূপ তরঙ্গ উত্থিত হইত, তাহা বুদ্ধিমানুমাত্রেই বুঝিতে পারেন; কিন্তু তিনি সে ভাব কাহারও নিকট প্রকাশ করিতেন না। ক্রমে ক্রমে তিনি হৃদয়কে দৃঢ় করিয়া মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হন এবং নিভাঁকচিত্তে সেই অন্তিম সময়ের অপেক্ষা করিতেছিলেন। এই সময়ে তিনি নিজ দোষহীনতার কথা উল্লেখ করিয়া ফ্রান্সিস ও ক্লেভারিংকে একখানি পত্র লেখেন। তাঁহারা মহারাজকে বাচাইবার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু কৃতকার্য হইতে পারেন নাই। নবাব মোবারক উদ্দৌলাও কাউন্সিলে এইরূপ পত্র লিখিয়াছিলেন যে, যতদিন পর্যন্ত ইংলণ্ডাধিপের এ সম্বন্ধে মতামত না আইসে, ততদিন অবধি মহারাজের প্রাণদণ্ডের আদেশ প্রতিপালন না করা হয়; কিন্তু তাহাতেও কোন ফলোদয় হয় নাই॥৩৬

 ৩৬ পূর্বে রাধাচরণ মিত্রের জালকরা মোকর্দমায় প্রাণদণ্ডের আদেশ হইলে কলিকাতার অধিবাসিগণের আবেদনে তাহার দণ্ডাজ্ঞা রহিত হইয়াছিল। কিন্তু এক্ষণে নবাব নাজিমের অনুরোধেও নন্দকুমারের প্রাণদণ্ডাজ্ঞা কিছু দিনের জন্য স্থগিত রাখাও ঘটিয়া উঠে নাই। ইম্পেসাহেবের পুত্র স্বীয় পিতার জীবনীতে লিখিয়াছেন যে, নন্দকুমারের জন্য কেহ অনুরোধ করে নাই। কিন্তু নবাব নাজিমের অনুরোধ অপেক্ষা আর কাহারও অনুরোধ গুরুতর হইতে পারে কি না, তাহা আমরা জানি না। রাধাচরণ মিত্রের দণ্ডাজ্ঞা রহিত করার জন্য যেমন