পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
মহারাজ নন্দকুমার
২৪৯

 আমরা পূর্বে উল্লেখ করিয়াছি যে, হেস্টিংস প্রভৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ উপস্থিত হয়, তাহার দিন জাল-করা মোকর্দমার পরে ধার্য হইয়াছিল। হেস্টিংসের বিরুদ্ধে কাহারও দোষের প্রমাণ হয় নাই। কিন্তু বারওয়েলের বিরুদ্ধে ফাউক ও নন্দকুমার দোষী ও রাধাচরণ নির্দোষ হন বলিয়া দেখিতে পাওয়া যায়। সে অভিযোগে নন্দকুমার প্রকৃত দোষী হইয়াছিলেন কি না, এ বিষয়েও অনেকে সন্দিহান হইয়া থাকেন।

 ক্রমে মহারাজের মৃত্যুদিন অগ্রসর হইয়া আসিল। তাহার জীবনের শেষ দুই দিনের চিত্র অতীব শোকাবহ; কিন্তু তাহা হইতে মহারাজ নন্দকুমারের স্থিরচিত্ততারও প্রমাণ পাওয়া যায়। কলিকাতার তদানীন্তন সেরিফ ম্যাক্লেবী সাহেব এই দুই দিনের ঘটনা লিখিয়া গিয়াছেন। তিনি একজন সাধুপ্রকৃতি ইংরেজ ছিলেন। আমরা তাহার লিখিত বর্ণনাই উদ্ধৃত করিতেছি। তিনি এইরূপ লিখিয়াছেন,—“৪ঠা আগস্ট শুক্লবার সন্ধ্যাকালে আমি মহারাজের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাই। তিনি আমাকে অভ্যর্থনা করিয়া এরূপভাবে কথোপকথন আরম্ভ করিলেন যে, আমি আশ্চর্যাম্বিত হইয়া ভাবিতে লাগিলাম, কল্য এ জগৎ হইতে যে তাঁহাকে চিরবিদায় লইতে হইবে, তাহা কি তিনি অবগত নহেন? আমি অবশেষে দ্বিভাষীর দ্বারা তাহাকে অবগত করাই যে, আমি অদ্য তাঁহাকে শেষ অভিবাদন করিতে আসিয়াছি। কল্য সেই শোচনীয় ব্যাপারে মহারাজের যেরূপ সুবিধা হয়, তজ্জন্য আমার কর্তব্যানুরোধে আমাকে সমস্তই প্রতিপালন করিতে হইবে। আপনার যে-সমস্ত অন্তিম বাসনা আছে, তাহ পূর্ণ করিতে আমি চেষ্টা পাইব। আপনার শিবিক ও বাহকগণ নিয়মিত সময়ে আপনার গৃহ-সম্মুখে অপেক্ষা করিবে এবং আপনার যে সমস্ত বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিবেন, তাহাদিগকেও রক্ষা করিতে যত্ন পাইব। মহারাজ উত্তর দিলেন—আমার সাক্ষাতের জন্য তিনি আপ্যায়িত হইয়াছেন এবং তজ্জন্য আমাকে ধন্যবাদ দিতেছেন। পরে তিনি কপালে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া বলিলেন, বিধাতার ইচ্ছা অবশ্যই সম্পন্ন হইবে। তিনি ক্লেভারিং, মন্সন ও ফ্রান্সিসকে সম্মান প্রদর্শন করিয়া, রাজা গুরুদাসের তত্ত্বাবধানের জন্য ও তাঁহাকে ব্রাহ্মণসমাজের নেতা বলিয়া মনে করিবার জন্য অনুরোধ করেন। সেই সময়ে তাহার শান্তভাব অতিব বিস্ময়জনক। তিনি একটিও দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করেন নাই; তাহার কথায় কোনরূপ পরিবর্তন বা চাপল্যভাব ছিল না। আমি জ্ঞাত হইয়াছিলাম যে, কিছু পূর্বে তিনি তাহার জামাতা রায় রাধাচরণের নিকট হইতে চিরবিদায় লইয়াছিলেন। তাঁহার অদ্বিতীয় দৃঢ়তার নিকট আমরা কিছুই নহি মনে করিয়া, আমি তথা হইতে বিদায় গ্রহণ করিলাম। নীচে আসিলে জেলরক্ষক আমাকে বলিল যে, তাহার


তৎকালে কাউন্সিলে আবেদন করা হইয়াছিল, নন্দকুমারের সম্বন্ধে নবাব নাজিমও সেইরূপই কাউন্সিলে অনুরোধ-পত্র লিখিয়াছিলেন।