পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৩৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৭২
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী

এই যে অন্তবিবাদে আমাদের সর্বনাশ হইতেছে, প্রজাহিতৈষী রাজপ্রতিনিধিগণের তাহার প্রতি দৃষ্টি আছে কি? যে সিরাজ ইংরেজ ঐতিহাসিকগণের মতে ভয়ানক অত্যাচারী বলিয়া কথিত, তাহারও হিন্দুর প্রতি অনুরাগ দেখিলে অবাক হইতে হয়; সুতরাং তাহার সময়ে এরূপ অন্তবিবাদের সম্ভাবনা ছিল না। যাহা হউক, সিরাজের রাজত্বের ভাল মন্দ বলিবার আবশ্যক নাই; তাহ। যখন বিস্মৃতি-সাগরে ডুবিয়া গিয়াছে, তখন আর সে কথা তুলিয়া কাজ নাই। তবে ইংরেজ ঐতিহাসিক-বণিত অত্যাচারী সিরাজের রাজত্বে যে একটু আধটু আলােক ছিল, ইংরেজরাজত্ব সর্বাংশে সুখকর হইয়াও, তাহাতে সেটুকুর কেন অভাব হয়, বুঝিতে পারি না। তাই স্বতঃই মনে উক্ত প্রশ্নের উদয় হইয়া থাকে।

 মহরম-উপলক্ষে মুর্শিদাবাদ উৎসবময়। ধরণীগৰ্ভস্থিত সিরাজ সে উৎসব দেখিতেছে না। জ্যোৎস্নাময়ী রজনীর কৌমুদীয়াত ভাগীরথীশােভা তাহার নয়নপথে পতিত হইতেছে না। কেবল চারিদিকে ঘনীভূত অন্ধকার তাহাকে বেষ্টন করিয়া দাড়াইয়া আছে। আঁধার ভিন্ন আর কিছুই তাহার নিকটে নাই। তাহার সেই বিখণ্ডিত দেহের পরিণাম কি হইয়াছে, কি করিয়া বলিব? তবে এতদিন যে মাটি হইয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই। তাহার আত্মীয়স্বজন এমন কেহ নাই যে, তাহার জন্য দুই এক বিন্দু অশ্রু বিসর্জন করে। সকলেই একে একে অনন্তনিদ্রায় অভিভূত। খােশবাগের বৃক্ষান্ধকারে চিরদিনই তাহাকে অবস্থিতি করিতে হইবে। কেহ দেখিতে আসিবে না, কেহ কাদিতে আসিবে না। কেবল ভাগীরথীর কলধ্বনি। ও ভ্রান্ত বায়ুচ্ছাসের হু হু রব ব্যতীত আর কোনও শব্দ তাহার নিকটে পঁহুছিবে কি না জানি না। আঁধারের জন্য যাহার জন্ম, তাহাকে অনন্ত জীবন আঁধারেই থাকিতে হইবে।