পাতা:মুর্শিদাবাদ কাহিনী.djvu/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
আলিবর্দীর বেগম
৮৭


হলওয়েল আরও এক স্থলে বলিয়াছেন যে, নবাব-বেগম সিরাজকে তাহার অযথা অত্যাচার হইতে নিবৃত্ত হইতে নিষেধ করিতেন; কিন্তু সিরাজ তাহার সকল কথায় মনোযোগ দিতেন না। বেগম ইংরেজদিগের সহিত বিবাদ করিতে বারংবার নিষেধ করেন এবং উক্ত বিবাদে সিরাজের সর্বনাশ হইবার কথাও বলেন।[১] পরন্তু হলওয়েল সাহেবের সমস্ত কথা আমরা স্বীকার করিতে পারি না।

 প্রচলিত ইতিহাসে দেখা যায় যে, নবাব আলিবর্দী খা ঁসিরাজকে ইংরেজদিগের সহিত বিবাদ করিতে নিষেধ করিয়া যান। কিন্তু সে কথা যথার্থ বলিয়া বোধ হয় না। তিনি ইংরেজদিগকে বিশেষরূপে দমনের জন্য মৃত্যুশয্যায় সিরাজকে উপদেশ প্রদান করিয়াছিলেন। আলিবর্দীর বেগম যে সে বিষয় জানিতেন না, ইহা আমাদের বিশ্বাস হয় না। বিশেষতঃ রাজনৈতিক বিষয়ে তাহার যতদূর দূরদর্শিতা ছিল, তাহাতে তিনি যে আলিবর্দীর মতের সম্পূর্ণ পক্ষপাতিনী ছিলেন, ইহাই আমাদের মনে উদয় হয়। সুতরাং ইংরেজদিগের সহিত সিরাজকে বিবাদ করিতে তাহার নিষেধ করা আমরা তাদৃশ সঙ্গত মনে করিতে পারি না। তবে সিরাজ যখন কোন নিষ্ঠুর বা গর্হিত পন্থা অবলম্বন করিতে যাইতেন, তখন তিনি তাহাকে সেই পন্থাবলম্বনে বাধা দিতেন বলিয়াই বোধ হয়। আমাদিগের বিশ্বাস, সিরাজ ইংরেজদিগের সহিত কখনও অসদ্ব্যবহার করেন নাই; বরং তদানীন্তন ইংরেজরাই সাধুজনের বিপরীত ব্যবহার করিয়া সভ্য ইউরোপখণ্ডের নামে কলঙ্কপ্রদান করিয়াছেন। এস্থলে উক্ত বিষয়ে অধিক আলোচনার প্রয়োজন নাই।

 ইংরেজদিগের সহিত বিবাদ গুরুতর হইয়া উঠিলে, সিরাজ কর্মচারিগণের বিশ্বাসঘাতকতায় পলাশীর রণক্ষেত্রে পরাজিত হইয়া, অবশেষে মীরণের আদেশে নিহত হন এবং মীরজাফর বাঙ্গলা, বিহার ও উড়িষ্যার মসনদে উপবেশন করেন। এই সময় হইতে নবাব আলিবর্দী খাঁর পরিবারবর্গের প্রতি অত্যন্ত অত্যাচার আরম্ভ হয়। যে বেগমের পরামর্শে নবাব আলিবর্দী খাঁ সমস্ত রাজনৈতিক কার্য সম্পন্ন করিতেন এবং যাহার পরামর্শবলে নবাব আলিবর্দী খাঁর আদর্শ-শাসনে বঙ্গের প্রজাগণ বিঘ্নরাশির মধ্যেও শান্তিলাভ করিতে সমর্থ হইয়াছিল, যে অতুলনীয় রমণীরত্নকে দেশীয় ও বিদেশীয়গণ মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করিতেন, তাহারই অন্নে ও সংসারে প্রতিপালিত হইয়া মীরজাফরের পুত্র ছোট নবাব মীরণ তাহার প্রতি যেরূপ অত্যাচার করিয়াছিলেন, তাহা স্মরণ করিতে গেলে, কষ্টে ও ঘৃণায় হৃদয় অভিভূত হইয়া পড়ে। আলিবর্দীর বেগম ও তাহার কন্যাদ্বয় ঘসেটী ও আমিনা এবং সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী ও শিশু কন্যাকে অযথা কষ্ট প্রদান করিয়া বন্দীভাবে রাখা হয়। বন্দী-অবস্থায় তাঁহারা। চূড়ান্ত যন্ত্রণা ভোগ করিলে, তাহাদিগকে মুর্শিদাবাদ হইতে ঢাকায় নির্বাসিত করা হইল। ঢাকায় তাহাদিগকে অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় বাস করিতে হইয়াছিল।

  1. Holwell's Interesting Historical Events, Pt. I, p. 176.