পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০
মৃণালিনী।

সিন্ধুকূলে রই, নূতন তরি বই পারে তােরা, কে যাইবিগো।
নূতন ডিঙ্গায় নূতন মাঝি—কে যাইবিগো।
দান দিবে যেই, পার হবে সেই, দান দিয়ে, কে যাইবিগো।
অই দেখ বয়, মধুর মলয়, এই বেলা, কে যাইবিগো।
তুলে দিব পাল, না ছাড়িব হাল, সুখের পারে কে যাইবিগো।
যদি পথিক পাই, কূল তেজে যাই, অকূল মাঝে কে যাইবিগো।
পাইলে তুফান, আগে দিব প্রাণ, আমার সাতে, কে যাইবিগো।”

 রত্নময়ী কহিল, “তুমি আমার অপেক্ষাও রসের পাটনী। বেলা না হইলে আরও দুই একটী গীত শুনিতাম। এখন গৃহের কাজ সারিয়া ঘাটের কাজে যাই।”

 এই বলিয়া রত্নময়ী গৃহকর্মে গেল। মৃণালিনী এপর্য্যন্ত কোন কথা কহেন নাই। এখন গিরিজায়া তাঁহাকে সম্বােধন করিয়া কহিল,

 “ঠাকুরাণি জাগিয়াছ?”

 মৃণালিনী কহিলেন, “জাগিয়াই আছি। জাগিয়াই থাকি। তােমার গান শুনিতে ছিলাম—তােমার মত কাণ্ডারীকে কেহ যেন বিশ্বাস করে না।”

 গি। “কেন?”

 মৃ। “তুমি ঘাটে আনিয়া আমায় ডুবাইলে।”

 গিরিজায়া তখন গম্ভীরভাবে কহিল, “কি করিব? আমার দোষ নাই। আমি শুনিয়াছি তিনি এই নগরমধ্যে আছেন; এপর্য্যন্ত সন্ধান পাই নাই। কিন্তু আমরা ত সবে দুই তিন দিন আসিয়াছি মাত্র। শীঘ্র সন্ধান করিব।”

 মৃ। “গিরিজারে—যদি এ নগরে সন্ধান না পাই। তবে যে এই পাটনীর গৃহে মৃত্যু পর্য্যন্ত বাস করিতে হইবে। আমার যে যাইবার স্থান নাই।