পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনি তােমার কে?
১০১

 মৃণালিনী উপাধানে মুখ লুকাইলেন। গিরিজায়ার গণ্ডে নীরবস্রুত অশ্রু বহিতে লাগিল।

 এমত সময়ে—রত্নময়ী শশব্যস্তে গৃহমধ্যে আসিয়া কহিল, “সই! সই! দেখিয়া যাও। আমাদিগের বটতলায় কে ঘুমাইতেছে। আশ্চর্য্য পুরুষ!”

 গিরিজায়া কুটীর দ্বারে দেখিতে আইল। মৃণালিনীও কুটীর দ্বার পর্য্যন্ত আসিয়া দেখিলেন। উভয়েই দৃষ্টিমাত্র চিনিলেন।

 সাগর একেবারে উছলিয়া উঠিল। মৃণালিনী গিরিজায়াকে আলিঙ্গন করিলেন। গিরিজায়া গায়িল,

“কণ্টকে গঠিল বিধি মৃণাল অধমে।”

 সেই ধ্বনি স্বপ্নবৎ হেমচন্দ্রের কর্ণে প্রবেশ করিয়াছিল। মৃণালিনী গিরিজায়ার কণ্ঠকণ্ডুয়ন দেখিয়া কহিলেন,

 “চুপ, রাক্ষসি, আমাদিগের দেখা দেওয়া হইবে না, ঐ উনি জাগরিত হইতেছেন। এই অন্তরাল হইতে দেখ উনি কি করেন। উনি যেখানে যান, অদৃশ্য ভাবে, দূরে থাকিয়া, উঁহার সঙ্গে যাও।—একি! উঁহার অঙ্গ রক্তময় দেখিতেছি কেন? চল, তবে আমিও সঙ্গে চলিলাম।”

 হেমচন্দ্র গাত্রোত্থান করিয়া কিয়দ্দূর গেলে, মৃণালিনী আর গিরিজায়া তাঁহার অনুসরণার্থ গৃহ হইতে নিষ্ক্রান্তা হইলেন। তখন রত্নময়ী জিজ্ঞাসা করিল,

 “ঠাকুরাণি, উনি তােমার কে?”

 মৃণালিনী কহিলেন, “দেবতা জানেন।”