পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমি ত উন্মাদিনী।
১১৭

সকরুণ, হাস্য প্রকটিত হইল। বালিকা, প্রগল্‌ভতা প্রাপ্ত হইলেন। মনোরমা কহিলেন, “বুঝিয়াছি। তুমি না বুঝিয়া ভালবাস, তাহার পরিণাম ঘটিয়াছে।”

 হে। “ভাল বাসিতাম।” হেমচন্দ্র বর্ত্তমানের পরিবর্ত্তে অতীত কাল ব্যবহার করিলেন। অমনি নীরবে নিঃস্রুত অশ্রুজলে তাঁহার মুখমণ্ডল ভাসিয়া গেল।

 মনোরম বিরক্ত হইলেন। বলিলেন “ছি, ছি! প্রতারণা! এসংসার প্রতারণা, প্রতারণা! প্রতারণা! কেবল প্রতারণা!” মনোরমা বিরক্তিবশতঃ আপন অলকদাম চম্পকাঙ্গুলিতে জড়িত করিয়া টানিতে লাগিলেন।

 হেমচন্দ্র বিস্মিত হইলেন; কহিলেন “কি প্রতারণা করিলাম?”

 মনোরমা কহিলেন, “ভালবাসিতাম কি? তুমি ভালবাস। নহিলে কাঁদিলে কেন? কি? আজি তোমার স্নেহের পাত্র অপরাধী হইয়াছে বলিয়া তোমার প্রণয় বিনষ্ট হইয়াছে? কে তোমায় এমত প্রবোধ দিয়াছে?” বলিতে বলিতে মনোরমার প্রৌঢ়ভাবাপন্ন মুখ কান্তি সহসা প্রফুল্ল পদ্মবৎ অধিকতর ভাবব্যঞ্জক হইতে লাগিল, চক্ষু অধিক জ্যোতিঃস্ফূর্য্যৎ হইতে লাগিল, কণ্ঠস্বর অধিকতর পরিস্ফুট, আগ্রহ প্রকম্পিত হইতে লাগিল; বলিতে লাগিলেন, “এ কেবল বীর দম্ভকারী পুরুষদিগের দুর্প মাত্র, অহঙ্কার করিয়া প্রণয় অগ্নি নির্ব্বাণ করা যায়? তুমি বালির বাঁধ দিয়া এই কুলপরিপ্লাবিনী গঙ্গার বেগ রোধ করিতে পারিবে, তথাপি তুমি প্রণয়িনীকে পাপিষ্ঠা মনে করিয়া কখনও প্রণয়ের বেগ রোধ করিতে পারিবে না। হা কৃষ্ণ! মানুষ সকলেই প্রতারক!”