পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
মৃণালিনী।

 হেমচন্দ্র বিস্মিত হইয়া ভাবিলেন, আমি ইহাকে এক দিন বালিকা মনে করিয়াছিলাম!”

 মনোরমা কহিতে লাগিলেন, “তুমি পুরাণ শুনিয়াছ? আমি পণ্ডিতের নিকট তাহার গূঢ়ার্থসহিত শুনিয়াছি। লেখা আছে, ভগীরথ গঙ্গা আনিয়াছিলেন; এক দাম্ভিক মত্ত হস্তী তাহার বেগ সম্বরণ করিতে গিয়া ভাসিয়া গিয়াছিল। ইহার অর্থ কি? গঙ্গা প্রেম প্রবাহ স্বরূপ; ইহা জদীশ্বর পদ-পদ্ম-নিঃসৃত; ইহা জগতে পবিত্র,—যে ইহাতে অবগাহন করে সেই পুণ্যময় হয়। ইনি মৃত্যুঞ্জয় জটা-বিহারিণী; যে মৃত্যুকে জয় করিতে পারে, সেও প্রণয়কে মস্তকে ধারণ করে। আমি যেমন শুনিয়াছি, ঠিক সেইরূপ বলিতেছি। দাম্ভিক হস্তী দম্ভের অবতার স্বরূপ, সে প্রণয়বেগে ভাসিয়া যায়। প্রণয় প্রথমে একমাত্র পথ অবলম্বন করিয়া উপযুক্ত সময়ে শতমুখী হয়, প্রণয় স্বভাবসিদ্ধ হইলে, শত পাত্রে ন্যস্ত হয়—পরিশেষে সাগর সঙ্গমে লয় প্রাপ্ত হয়— সংসারস্থ সর্ব্বজীবে বিলীন হয়।”

 হে। তোমার উপদেষ্টা কি বলিয়াছেন প্রণয়ের পাত্রাপাত্র নাই? পাপাসক্তকে কি ভালবাসিতে হইবে?”

 ইহার উত্তর ত মনোরমার উপদেষ্টা বলিয়া দেন নাই। উত্তর জন্য আপনার হৃদয় মধ্যে সন্ধান করিলেন; অমনি উত্তর আপনি মুখে অসিল। কহিলেন, “পাপাসক্তকে ভালবাসিতে হইবে। প্রণয়ের পাত্রাপাত্র নাই। সকলকেই ভালবাসিবে, প্রণয় জন্মাইলেই তাহাকে যত্নে স্থান দিবে, কেন না প্রণয় অমূল্য। ভাই, যে ভাল, তাকে কে না ভালবাসে? যে মন্দ, তাকে যে আপনা ভুলিয়া ভালবাসে, আমি তাকে বড় ভালবাসি। কিন্তু আমি ত উন্মাদিনী।”

 হেমচন্দ্র বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “মনোরমা, এ সকল