পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
মৃণালিনী।

 ম। “স্মৃতি কি আপন ইচ্ছাধীন? একি পাট কাপড়, মনে করিলে তুলিব, মনে করিলে পরিব? রাজপুত্র, কালসর্পকে মনে করিয়া কি সুখ? কিন্তু তথাপি তুমি তাহাকে ভুলিতেছ না কেন?”

 হে। “তাহার দংশনের জ্বালায়।”

 ম। “আর সে যদি দংশন না করিত? তবে কি তাহাকে ভুলিতে?”

 হেমচন্দ্র উত্তর করিলেন না। মনোরমা বলিতে লাগিলেন “তোমার ফুলের মালা কাল সাপ হইয়াছে, তবু তুমি ভুলিতে পারিতেছ না; আমি, আমি ত পাগলিনী—আমি আমার পুষ্পহার কেন ছিঁড়িব?”

 হেমচন্দ্র কহিলেন, “তুমি এক প্রকার অন্যায় বলিতেছ না। বিস্মৃতি স্বেচ্ছাধীন ক্রিয়া নহে; লোকে আত্মগরিমায় অন্ধ হইয়া পরের প্রতি যে সকল উপদেশ দান করে, তন্মধ্যে “বিস্মৃত হও” এই উপদেশের অপেক্ষা হাস্যাস্পদ আর কিছুই নাই। কেহ কাহাকে বলে না, অর্থচিন্তা ত্যাগ কর; যশের ইচ্ছা ত্যাগ কর; জ্ঞানচিন্তা ত্যাগ কর; ক্ষুধানিবারণেচ্ছা ত্যাগ কর; তৃষ্ণানিবারণেচ্ছা ত্যাগ কর; নিদ্রা ত্যাগ কর; তবে কেন বলিবে, প্রণয় ত্যাগ কর? প্রণয় কি এ সকল অপেক্ষায় সুখকারিতায় ন্যূন? এ সকল অপেক্ষায় প্রণয় নূন নহে— কিন্তু ধর্ম্মের অপেক্ষা ন্যূন বটে। ধর্ম্মের জন্য প্রেমকে সংহার করিবে। স্ত্রীর পরম ধর্ম্ম সতীত্ব। সেই জন্য বলিতেছি, যদি পার, প্রেম সংহার কর।”

 ম। “আমি অবলা; জ্ঞানহীনা; বিবশা; আমি ধর্ম্মাধর্ম কাহাকে বলে তাহা জানি না। আমি এই মাত্র জানি ধর্ম্ম ভিন্ন প্রেম জন্মে না।”