পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
এত দিনের পর।
১৩৭

কথা ছিল না? যদি মনে বলিবার কথা ছিল, ভাষার শব্দ ছিল, তবে কেন ইহারা কথা কহে না?

 মনুষ্যের একটী ব্যতীত মন নহে। তখন চক্ষেরে দেখাইতেই মন উন্মত্ত—কথা কহিবে কি প্রকারে? এমত সময়ে কেবল প্রণয়ীর নিকটে অবস্থিতিমাত্র, এত গুরুতর সুখ, যে হৃদয়মধ্যে অন্য সুখের স্থান থাকে না। যে সে সুখ ভোগ করিতে থাকে, সে আর কথার সুখ বাসনা করে না।

 সে সময়ে এত কথা বলিবার থাকে, যে কোন্ কথা আগে বলিব, তাহা কেহ স্থির করিতে পারে না।

 মনুষ্যভাষায় এমন কোন্ শব্দ আছে যে সে সময়ে প্রযুক্ত হইতে পারে?

 তাঁহারা পরস্পরের মুখ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। হেমচন্দ্র, মৃণালিনীর সেই প্রেমময় মুখ আবার দেখিলেন—হৃষীকেশবাক্যে প্রত্যয় দূর হইতে লাগিল। সে গ্রন্থের ছত্রে ছত্রে ত প্রেমোক্তি লেখা আছে! হেমচন্দ্র তাঁহার লোচন প্রতি চাহিয়া রহিলেন, সেই অপূর্ব্ব আয়তনশালী—ইন্দীবরনিন্দিত, অন্তঃকরণের দর্পণরূপ চক্ষুঃপ্রতি চাহিয়া রহিলেন—তাহা হইতে কেবল প্রেমাশ্রুজল বহিতেছে!—সে চক্ষুঃ যাহার সে কি অবিশ্বাসিনী!

 হেমচন্দ্র প্রথমে কথা কহিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “মৃণালিনি! কেমন আছ?”

 মৃণালিনী উত্তর করিতে পারিলেন না। এখনও তাঁহার চিত্তশান্ত হয় নাই; উত্তরের উপক্রম করিলেন; কিন্তু আবার চক্ষু জলে ভাসিয়া গেল। কণ্ঠরুদ্ধ হইল; কথা সরিল না।

 হেমচন্দ্র আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কেন আসিয়াছ?”

ঠ৩