পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিনা সূতার হার।
১৪৫

জন্য এই নিদারুণ ব্রতে প্রবৃত্ত হইয়াছি। যদি জগদীশ্বরী অনুগ্রহ করেন তবে দুই চারি দিনের মধ্যে রাজ্য লাভ করিব এবং তোমার পাণিগ্রহণ করিব। ইহাতে তোমার বৈধব্যজনিত যে বিঘ্ন, শাস্ত্রীয় প্রমাণের দ্বারা আমি তাহার নিরাকরণ করিতে পারিব। কিন্তু তাহাতে দ্বিতীয় বিঘ্ন এই যে তুমি কুলীন কন্যা, জনার্দ্দন শর্ম্মা কুলীন শ্রেষ্ঠ, আমি শ্রোত্রীয়।”

 মনোরমা এ সকল কথায় কর্ণপাত করিতেছিলেন কি না সংশয়। পশুপতি দেখিলেন যে মনোরমা চিত্ত হারাইয়াছেন। পশুপতি, সরল, অবিকৃতা, বালিকা মনোরমাকে ভাল বাসিতেন,—প্রৌঢ়া তীক্ষ্ণ বুদ্ধিশালিনী মনোরমাকে ভয় করিতেন। কিন্তু অদ্য ভাবান্তরে সন্তুষ্ট হইলেন না। তথাপি পুনরুদ্যম করিয়া পশুপতি কহিলেন, “কিন্তু কুলরীতি ত শাস্ত্রমূলক নহে, কুলনাশে ধর্ম্মনাশ বা জাতিভ্রংশ হয় না। তাঁহার অজ্ঞাতে যদি তোমাকে বিবাহ করিতে পারি, তবে ক্ষতিই কি? তুমি সম্মত হইলেই তাহা পারি। পরে তোমার পিতামহ জানিতে পারিলে বিবাহ ত ফিরিবে না।”

 মনোরমা কোন উত্তর করিলেন না। তিনি সকল শ্রবণ করিয়াছিলেন কি না সন্দেহ। একটি কৃষ্ণবর্ণ মার্জ্জার তাঁহার নিকটে আসিয়া বসিয়াছিল, তিনি সেই বিনাসূত্রের মালা তাহার গলদেশে পরাইতে ছিলেন। পরাইতে মালা খুলিয়া গেল। মনোরমা তখন আপন মস্তকহইতে কেশগুচ্ছ ছিন্ন করিয়া তৎসূত্রে আবার মালা গাঁথিতে লাগিলেন।

 পশুপতি উত্তর না পাইয়া, নিঃশব্দে মালা-কুসুমমধ্যে মনোরমার অনুপম অঙ্গুলির গতি মুগ্ধলোচনে দেখিতে লাগিলেন।