পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫২
মৃণালিনী।

যোদ্ধৃবেশ; সর্ব্বাঙ্গে প্রহরণজাল মণ্ডিত; লোচনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। আর যে সকল সিন্ধুপারজাত অশ্বপৃষ্ঠে তাহার আরোহণ করিয়া যাইতেছিল, তাহাই বা কি মনোহর! পর্ব্বত শিলাখণ্ডের ন্যায় বৃহদাকার, বিমার্জ্জিত-দেহ, বক্রগ্রীব, বল্‌গারোধাসহিষ্ণু, তেজোগর্ব্বে নৃত্যশীল! আরোহীরা কিবা তচ্চালন-কৌশলী—অবলীলা ক্রমে সেই রুদ্ধ বায়ুতুল্য তেজঃপ্রখর অশ্ব সকল দমিত করিতেছে। দেখিয়া বঙ্গবাসীরা বহুতর প্রশংসা করিল।

 সপ্তদশ অশ্বারোহী দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় অধরোষ্ঠ সংশ্লিষ্ট করিয়া নীরবে রাজপুরাভিমুখে চলিল। কৌতুহল বশতঃ কোন নগরবাসী কিছু জিজ্ঞাসা করিলে, সমভিব্যাহারী একজন ভাষাজ্ঞ ব্যক্তি বলিয়া দিতে লাগিল “ইহারা যবন রাজার দূত।” এই বলিয়া ইহার প্রান্তরাল ও কোষ্ঠপালদিগের নিকট পরিচয় দিয়াছিল—এবং পশুপতির আজ্ঞা ক্রমে সেই পরিচয়ে নির্ব্বিঘ্নে নগরমধ্যে প্রবেশলাভ করিল।

 সপ্তদশ অশ্বারোহী রাজদ্বারে উপনীত হইল। বৃদ্ধ রাজার শৈথিল্যে আর পশুপতির কৌশলে রাজপুরী প্রায় রক্ষকহীন। রাজসভা ভঙ্গ হইয়াছিল—পুরীমধ্যে কেবল পৌরজন ছিল মাত্র —অল্পসংখ্যক দৌবারিক দ্বার রক্ষা করিতেছিল। এক জন দৌবারিক জিজ্ঞাসা করিল, “তোমরা কি জন্য আসিয়াছ?”

 যবনেরা উত্তর করিল “আমরা যবন রাজপ্রতিনিধির দূত; বঙ্গরাজের সহিত সাক্ষাৎ করিব।”

 দৌবারিক কহিল “মহারাজাধিরাজ বঙ্গেশ্বর এক্ষণে অন্তঃপুরে গমন করিয়াছেন—এখন সাক্ষাৎ হইবে না।”

 যবনেরা নিষেধ না শুনিয়া মুক্ত দ্বারপথে প্রবেশ করিতে উদ্যত হইল। সর্ব্বাগ্রে একজন খর্ব্বকায়, দীর্ঘবাহু, কুরূপ যবন। দুর্ভাগ্যবশতঃ দৌবারিক তাহার গতিরোধ জন্য শূলহস্তে তাহার