পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যবনদূত যমদূত বা।
১৫৩

 সম্মুখে দাঁড়াইল। কহিল “পশ্চাৎ অপসৃত হও—নচেৎ এক্ষণেই বর্ষাঘাতে মারিব।”

 “আপনিই তবে মর!” এই বলিয়া ক্ষুদ্রাকার যবন দৌবারিককে নিজ করস্থ বর্ষাগ্রে বিদ্ধ করিল। দৌবারিক প্রাণত্যাগ করিল। তখন আপন সঙ্গীদিগের মুখাবলোকন করিয়া ক্ষুদ্রকায় যবন কহিল, “এক্ষণে আপন আপন কার্য্য কর।” অমনি ষোড়শ বাক্যহীন অশ্বারোহীদিগের মধ্য হইতে ভীষণ জয়ধ্বনি সমুখিত হইল। তখন সেই ষোডশ যবনের কটিবন্ধ হইতে ষোড়শ অসিফলক নিষ্কোষিত হইল—এবং অশণি সম্পাত সদৃশ তাহার দৌবারিকদিগকে আক্রমণ করিল। দৌবারিকেরা রণসজ্জায় ছিল না—অকস্মাৎ নিরুদ্যোগে আক্রান্ত হইয়া আত্মরক্ষার কোন চেষ্টা করিতে পারিল না—মুহূর্ত্ত মধ্যে সকলেই নিপাত হইল।

 ক্ষুদ্রকায় যবন কহিল “যেখানে যাহাকে পাও বধ কর। পুরী অরক্ষিতা—বৃদ্ধ রাজাকে বধ কর।”

 তখন যবনেরা পুর মধ্যে তড়িতের ন্যায় প্রবেশ করিয়া বালবৃদ্ধবনিতা পৌরজন যেখানে যাহাকে দেখিল তাহাকে অসি দ্বারা ছিন্নমস্তক অথবা শূলাগ্রে বিদ্ধ করিল।

 পৌরজন তুমুল আর্ত্তনাদ করিয়া ইতস্ততঃ পলায়ন করিতে লাগিল। সেই ঘোর আর্ত্তনাদ, অন্তঃপুরে যথায় বৃদ্ধ রাজা ভোজন করিতেছিলেন তথায় প্রবেশ করিল। তাঁহার মুখ শুকাইল। জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি ঘটিয়াছে—যবন আসিয়াছে?”

 পলায়নতৎপর পৌরজনেরা কহিল “যবন সকলকে বধ করিয়া আপনাকে বধ করিতে আসিতেছে।”

 কবলিত অন্নগ্রাস রাজার মুখ হইতে পড়িয়া গেল। তাঁহার শুস্ক শরীর জলস্রোতঃপ্রহত বেতসের ন্যায় কাঁপিতে লা