পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আচার্য্য।
১৫

ছিলে। এক্ষণে যে যবন রাজার চরেরা তোমার অনুসরণ করিয়াছিল তাহারা কি প্রকারে নিবৃত্ত হইল?”

 হেমচন্দ্র কহিলেন, “তাহারা যমুনা-জলচরের উদরে পরিপক্ক হইতেছে। ও শ্রীচরণ আশীর্ব্বাদে সকল বিপদ্ হইতে উদ্ধার পাইয়াছি।”

 ব্রাহ্মণ কহিলেন, “অনর্থক বিপদ্‌কে কেনই নিমন্ত্রিত করিয়া আন? কেবল ক্রীড়া কৌতূহলের বশীভূত হইয়া বিপদাগার যবনদুর্গমধ্যে কেন প্রবেশ করিয়াছিলে?”

 হেম। “যবনদুর্গমধ্যে প্রবেশ করিবার উদ্দেশ্য এই, যে তাহা না করিলে যবনদিগের মন্ত্রণা কিছুই অবগত হইতে পরিতাম না। আর অসতর্ক হইয়াও আমি দুর্গমধ্যে প্রবেশ করি নাই। আমার অনুগত ভৃত্য দিগ্বিজয় যবনবেশে দুর্গ নিকটে আমার অশ্ব রক্ষা করিতেছিল। আমার পূর্ব্বপ্রদত্ত আদেশানুসারেই আমার নির্গমনের বিলম্ব দেখিয়া দুর্গমধ্যে অশ্ব লইয়া গিয়াছিল। ঐ উৎসবের দিন ভিন্ন, প্রবেশের এমত সুযোগ হইত না, এজন্য ঐ দিন দুর্গমধ্যে প্রবেশ করিয়াছিলাম।”

 ব্রাহ্মণ কিঞ্চিৎ পরুষভাবে কহিলেন, “এ সকল ঘটনা ত অনেক দিন হইয়া গিয়াছে, ইহার পূর্ব্বে তোমার এখানে আসার সম্ভাবনা ছিল। তুমি কেন বিলম্ব করিলে? তুমি মথুরায় গিয়াছিলে?”

 হেমচন্দ্র অধোবদন হইলেন। ব্রাহ্মণ কহিলেন “বুঝিলাম তুমি মথুরায় গিয়াছিলে। আমার নিষেধ গ্রাহ্য কর নাই। যাহাকে দেখিতে মথুরায় গিয়াছিলে, তাহার কি সাক্ষাৎ পাইয়াছ?”

 এবার হেমচন্দ্র রুক্ষভাবে কহিলেন “সাক্ষাৎ যে পাইলাম সে আপনারই দয়া। মৃণালিনীকে আপনি কোথায় প্রেরণ করিয়াছেন?”

খ২