পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
মৃণালিনী।

 মাধবাচার্য্য কহিলেন, “আমি যে কোথায় পাঠাইয়াছি, তাহা তুমি কি প্রকারে সিদ্ধান্ত করিলে?”

 হে। “মাধবাচার্য্য ভিন্ন এ মন্ত্রণা কাহার? আমি মৃণালিনীর ধাত্রীর মুখে শুনিলাম যে মৃণালিনী আমার অঙ্গুরীয় দেথিয়া কোথায় গিয়াছে আর তাহার উদ্দেশ নাই। আমার অঙ্গুরীয় আপনি পাথেয় জন্য ভিক্ষা স্বরূপ লইয়াছিলেন। অঙ্গুরীয়ের পরিবর্ত্তে অন্য রত্ন দিতে চাহিয়াছিলাম কিন্তু আপনি গ্রহণ করেন নাই। তৎকালেই আমি সন্দিহান হইয়াছিলাম, কিন্তু আপনাকে অদেয় আমার কিছুই নাই এই জন্যই বিনা বিবাদে অঙ্গুরীয় প্রদান করিয়াছিলাম। কিন্তু আমার সে অসতর্কতার আপনিই সমুচিত প্রতিফল দিয়াছেন।”

 মাধবাচার্য্য কহিলেন, “যদি তাহাই হয়, আমার উপর রাগ করিও না। তুমি দেবকার্য্য না সাধিলে কে সাধিবে? তুমি যবনকে না দূরীকৃত করিলে কে করিবে? যবন নিপাত তোমার এক মাত্র ধ্যান স্বরূপ হওয়া উচিত। এখন মৃণালিনী তোমার হৃদয়ের অর্দ্ধভাগিনী হইবে কেন? এক বার তুমি মৃণালিনীর আশায় মথুরায় বসিয়াছিলে বলিয়া তুমি পিতৃরাজ্যভ্রষ্ট হইয়াছ। যবনাগমনকালে হেমচন্দ্র যদি মথুরায় না থাকিয়া মগধে থাকিত, তবে মগধ জয় কেন হইবে? আবার কি সেই মৃণালিনীপাশে বদ্ধ হইয়া নিশ্চেষ্ট হইয়া থাকিবে! মাধবাচার্য্যের জীবন থাকিতে তাহা হইবে না সুতরাং যেখানে থাকিলে মৃণালিনী তোমার দুষ্প্রাপণীয়া হইবে, আমি তাহাকে সেইখানে রাখিয়াছি।”

 হে। “আপনার দেবকার্য্য আপনি উদ্ধার করুন; আমি অবসৃত হইলাম।”

 মা। “তোমার দুর্ব্বুদ্ধি ঘটিতেছে। এই কি তোমার দেবভক্তি? ভাল তাহাই না হউক, দেবতারা আত্মকর্ম্ম সাধন জন্য