পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৯

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ।


পরামর্শ।

 হেমচন্দ্র মাধবাচার্য্যের বসতি স্থলে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন যে আচার্য্য জপে নিযুক্ত আছেন। হেমচন্দ্র প্রণাম করিয়া কহিলেন,

 “আমাদিগের সকল যত্ন বিফল হইল। এক্ষণে ভৃত্যের প্রতি আর কি আদেশকরেন? যবন কর্ত্তৃক বঙ্গ অধিকৃত হইয়ছে। বুঝি এ ভারত ভূমির অদৃষ্টে যবনের দাসত্ব বিধিলিপি! নচেৎ বিনা বিবাদে যবনেরা বঙ্গজয় করিল কি প্রকারে? যদি এখন এই দেহ পতন করিলে এক দিনের তরেও জন্মভূমি দস্যুহস্ত হইতে মুক্তা হয় তবে এইক্ষণে তাহা করিতে প্রস্তুত আছি। সেই অভিপ্রায়ে কালি রাত্রে রণাকাঙ্ক্ষায় নগর মধ্যে অগ্রসর হইয়াছিলাম—কিন্তু রণত দেখিলাম না। কেবল দেখিলাম যে এক পক্ষ আক্রমণ করিতেছে, অপর পক্ষ পলাইতেছে।”

 মাধবাচার্য্য কহিলেন, “বৎস! দুঃখিত হইও না। দৈবনির্দ্দেশ কখন বিফল হইবার নহে। আমি যখন গণনা করিয়াছি যে যবন পরাভূত হইবে, তখন নিশ্চয়ই জানিও যে তাহারা পরাভূত হইবে। যবনেরা নবদ্বীপ অধিকার করিয়াছে বটে, কিন্তু নবদ্বীপধিকার ত বঙ্গাধিকার নহে। প্রধান রাজা সিংহাসন ত্যাগ করিয়া পলায়ন করিয়াছেন, কিন্তু এই বঙ্গভূমে অনেক করপ্রদ রাজা আছেন; তাঁহারা ত এখনও বিজিত হয়েন নাই। কে জানে যে সেই সকল রাজা সমবেত হইয়া প্রাণপণ করিলে, যবন বিজিত না হইবে?”