পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ধাতুমূর্ত্তির বিসর্জ্জন।
১৮৭

ধূম, ধূলি, তৎসঙ্গে লক্ষ লক্ষ অগ্নিস্ফুলিঙ্গে আকাশ অদৃশ্য হইতে লাগিল।

 দাবানল-সম্বেষ্টিত আরণ্য-গজের ন্যায় পশুপতি অগ্নিমধ্যে ইতস্ততঃ দাস দাসী স্বজনসহিত মনোরমার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন। কাহারও কোন চিহ্ন পাইলেন না। হতাশ হইলেন। তখন দেবীর মন্দির প্রতি তাহার দৃষ্টিপাত হইল। দেখিলেন দেবী অষ্টভুজার মন্দির অগ্নি কর্তৃক আক্রান্ত হইয়া জ্বলিতেছে। পশুপতি পতঙ্গবৎ তন্মধ্যে প্রবেশ করিলেন। দেখিলেন অনলমণ্ডল মধ্যে অদগ্ধা স্বর্ণপ্রতিমা বিরাজ করিতেছে। পশুপতি উন্মত্তের ন্যায় কহিলেন,

 “মা! জগদম্বে! আর তোমাকে জগদম্বা বলিব না। আর তোমার পূজা করিব না। তোমাকে প্রণামও করিব না। আশৈশব আমি কায়মনোবাক্যে তোমার সেবা করিলাম―ঐ পদধ্যান ইহ জন্মে সার করিয়াছিলাম―এখন, মা এক দিনের পাপে সর্ব্বস্ব হারাইলাম। তবে কি জন্য তোমার পূজা করিয়াছিলাম? কেনই বা তুমি আমার পাপমতি অপনীত না করিলে?”

 মন্দির-দহন অগ্নি অধিকতর প্রবল হইয়া গর্জ্জিয়া উঠিল। পশুপতি তথাপি প্রতিমা সম্বোধন করিয়া বলিতে লাগিলেন, “ঐ দেখ! ধাতুমূর্ত্তি!―তুমি ধাতুমূর্ত্তি মাত্র, দেবী নহ―ঐ দেখ, অগ্নি গর্জ্জিতেছে। যে পথে আমার প্রাণাধিকা গিয়াছে―সেই পথে, তোমাকেও প্রেরণ করিবে। কিন্তু আমি অগ্নিকে এ কীর্ত্তি রাখিতে দিব না―আমি তোমাকে স্থাপনা করিয়াছিলাম―আমিই তোমাকে বিসর্জ্জন করিব। চল! ইষ্টদেবি! তোমাকে গঙ্গার জলে বিসর্জ্জন করিব।”

 এই বলিয়া পশুপতি প্রতিমা উত্তোলন আকাঙ্ক্ষায় উভয় হস্তে