পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯০
মৃণালিনী।

নিকটবর্ত্তিনী হইলেন। দুর্গাদাস সভয়চিত্তে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি কে?”

 রমণী কহিলেন, “তোমরা কাহার সৎকার করিতেছ?”

 দুর্গাদাস কহিলেন, “মৃত ধর্ম্মাধিকার পশুপতির।”

 রমণী কহিলেন, “পশুপতির কি প্রকারে মৃত্যু হইল?”

 দুর্গাদাস কহিলেন, “প্রাতে নগরে জনরব শুনিয়াছিলাম যে তিনি যবন কর্ত্তৃক কারাবদ্ধ হইয়া কোন সুযোগে রাত্রিকালে পলায়ন করিয়াছিলেন। অদ্য তাঁহার অট্টালিকা ভস্মসাৎ হইয়াছে দেখিয়া ভস্মমধ্য হইতে অষ্টভুজার প্রতিমা উদ্ধার মানসে গিয়াছিলাম। তথায় গিয়া প্রভুর মৃতদেহ পাইলাম।”

 রমণী কোন উত্তর করিলেন না। গঙ্গাতীরে, সৈকতের উপর উপবেশন করিলেন। বহুক্ষণ নীরবে থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমরা কে?” দুর্গাদাস কহিলেন, “আমরা ব্রাহ্মণ। ধর্ম্মাধিকারের অন্নে প্রতিপালিত হইয়াছিলাম। আপনি কে?”

 তরুণী কহিলেন, “আমি তাঁহার পত্নী।”

 দুর্গাদাস কহিলেন, “তাঁহার পত্নী বহুকাল নিরুদ্দিষ্টা। আপনি কি প্রকারে তাঁহার পত্নী?”

 যুবতী কহিলেন, “আমি সেই নিরুদ্দিষ্টা কেশবকন্যা। অনুমরণভয়ে পিতা আমাকে এতকাল লুক্কায়িত রাখিয়াছিলেন। আমি অদ্য কালপূর্ণে বিধিলিপি পূরাইবার জন্য আসিয়াছি।”

 শুনিয়া পিতাপুত্রে শিহরিয়া উঠিলেন। তাহাদিগকে নিরুত্তর দেখিয়া বিধবা বলিতে লাগিলেন, “এক্ষণে স্ত্রী জাতির কর্ত্তব্য কার্য্য করিব। তোমরা উদ্যোগ কর।”

 দুর্গাদাস তরুণীর অভিপ্রায় বুঝিলেন। পুত্রের মুখ চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি বল?”

 পুত্র কিছু উত্তর করিল না। দুর্গাদাস তখন তরুণীকে কহিলেন,