পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অন্তিমকালে।
১৯১

“মা, তুমি বালিকা―এ কঠিন কার্য্যে কেন প্রস্তুত হইতেছ?”

 তরুণী ভ্রূভঙ্গী করিয়া কহিলেন, “ব্রাহ্মণ হইয়া অধর্ম্মে প্রবৃত্তি দিতেছ কেন?―ইহার উদ্যোগ কর।”

 তখন ব্রাহ্মণ আয়োজনজন্য নগরে পুনর্ব্বার চলিলেন। গমনকালে বিধবা দুর্গাদাসকে কহিলেন, “তুমি, নগরে যাইতেছ। নগরপ্রান্তে রাজার উপবনবাটিকায় হেমচন্দ্র নামে বিদেশী রাজপুত্র বাস করেন। তাঁহাকে বলিও মনোরমা গঙ্গাতীরে চিতারোহণ করিতেছে―তিনি আসিয়া একবার তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া যাউন, তাঁহার নিকট ইহলোকে মনোরমার এইমাত্র ভিক্ষা।”

 হেমচন্দ্র যখন ব্রাহ্মণমুখে শুনিলেন, যে মনোরমা পশুপতির পত্নী পরিচয়ে তাঁহার অনুমৃতা হইতেছেন, তখন তিনি কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। অতি ব্যস্তে দুর্গাদাসের সমভিব্যাহারে গঙ্গাতীরে আসিলেন। তথায় মনোরমার অতি মলিনা, উন্মাদিনী মূর্ত্তি, তাহার স্থির গম্ভীর, এখনও অনিন্দ্য-সুন্দর, মুখকান্তি দেখিয়া তাঁহার চক্ষের জল আপনি বহিতে লাগিল। তিনি বলিলেন “মনোরমে! ভগিনি! এ কি এ?”

 তখন মনোরমা, জ্যোৎস্নাপ্রদীপ্ত সরোবর তুল্য স্থির মূর্ত্তিতে মৃদু-গম্ভীর স্বরে, কহিলেন, “ভ্রাতঃ যে জন্য আমার জীবন, তাহা আজি চরমপ্রাপ্ত হইয়াছে। অদ্য আমি আমার স্বামীর সঙ্গে গমন করিব।”

 মনোরমা সংক্ষেপে অন্যের অশ্রাব্য স্বরে হেমচন্দ্রের নিকট পূর্ব্বকথার পরিচয় দিয়া বলিলেন,

 “আমার স্বামী অপরিমিত ধনসঞ্চয় করিয়া রাখিয়া গিয়াছেন। আমি এক্ষণে সে ধনের অধিকারিণী। আমি তাহা