পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯২
মৃণালিনী।

তোমাকে দান করিতেছি। তুমি তাহা গ্রহণ করিও। নচেৎ পাপিষ্ঠ যবনে তাহা ভোগ করিবে। তাহার অল্পাংশ ব্যয় করিয়া জনার্দ্দন শর্ম্মাকে কাশীধামে স্থাপন করিবে। জনার্দ্দনকে অধিক ধন দিও না। তাহা হইলে যবনে অপহরণ করিবে। আমার দাহান্তে তুমি আমার স্বামীর গৃহে গিয়া অর্থের অনুসন্ধান করিও। আমি যে স্থান বলিয়া দিতেছি সেই স্থান খনন করিলেই তাহা পাইবে। আমি ভিন্ন সে স্থান আর কেহই জানে না।” এই বলিয়া মনোরমা যথায় অর্থ আছে তাহা বর্ণিত করিলেন।

 তখন মনোরমা আবার হেমচন্দ্রের নিকট বিদায় হইলেন। জনার্দ্দনকে ও তাঁহার পত্নীকে উদ্দেশে প্রণাম করিয়া হেমচন্দ্রের দ্বারা তাঁহাদিগের নিকট কত স্নেহসূচক কথা বলিয়া পাঠাইলেন।

 পরে ব্রাহ্মণেরা মনোরমাকে যথা শাস্ত্র এই ভীষণ ব্রতে বৃতা করাইলেন। এবং শাস্ত্রীয় আচারান্তে, মনোরমা ব্রাহ্মণের আনীত নূতন বস্ত্র পরিধান করিলেন। দিব্য বসন পরিধান করিয়া, দিব্য পুষ্পমালা কণ্ঠে পরিয়া, পশুপতির প্রজ্বলিত চিতা প্রদক্ষিণ পূর্ব্বক, তদুপরি আরোহণ করিলেন। এবং সহাস্য আননে সেই প্রজ্বলিত হুতাশন রাশির মধ্যে উপবেশন করিয়া, নিদাঘসন্তপ্ত-কুসুম-কলিকার ন্যায় অনলতাপে প্রাণত্যাগ করিলেন।

―――