পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
মৃণালিনী।

ত্রস্ত হস্তে ধনুকে শর সংযোজন করিয়া কহিলেন “যে মৃণালিনীর বধকর্ত্তা সে আমার বধ্য। এই শরে গুরুহত্যা ব্রহ্মহত্যা উভয় দুষ্ক্রিয়া সাধন করিব।”

 মাধবাচার্য্য হাস্য করিলেন। কহিলেন, “গুরুহত্যা ব্রহ্মহত্যায় তোমার যত আমোদ, স্ত্রী হত্যায় আমার তত নহে। এক্ষণে তোমাকে পাতকের ভাগী হইতে হইবে না। মৃণালিনী জীবিতা আছে। পার তাহার সন্ধান করিয়া সাক্ষাৎ কর। এক্ষণে আমার আশ্রম হইতে স্থানান্তরে যাও। আশ্রম কলুষিত করিও না; অপাত্রে আমি কোন ভার ন্যস্ত করি না।” এই বলিয়া মাধবাচার্য্য পূর্ব্ববৎ জপে নিযুক্ত হইলেন।

 হেমচন্দ্র আশ্রম হইতে নির্গত হইলেন। ঘাটে আসিয়া ক্ষুদ্র তরণী আরোহণ করিলেন। যে দ্বিতীয় ব্যক্তি নৌকায় ছিল, তাহাকে বলিলেন, “দিগ্বিজয়! নৌকা ছাড়িয়া দাও।”

 দিগ্বিজয় বলিল, “কোথায় যাইব?” হেমচন্দ্র বলিলেন, “যেখানে ইচ্ছা—যমালয়।”

 দিগ্বিজয় প্রভুর স্বভাব বুঝিত। অস্ফুটস্বরে কহিল, “সেটা অল্প পথ।” এই বলিয়া সে তরণী ছাড়িয়া দিয়া স্রোতের প্রতিকূলে বাহিতে লাগিল।

 হেমচন্দ্র অনেক ক্ষণ নীরবে থাকিয়া শেষে কহিলেন, “দূর হউক! ফিরিয়া চল।”

 দিগ্বিজয় নৌকা ফিরাইয়া পুনরপি প্রয়াগের ঘাটে উপনীত হইল। হেমচন্দ্র লম্ফ দিয়া তীরে অবতরণ করিয়া পুনর্ব্বার মাধবাচার্য্যের আশ্রমে গেলেন।

 তাঁহাকে দেখিয়া মাধবাচার্য্য কহিলেন। পুনর্ব্বার কেন আসিয়াছ?”