পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আচার্য্য।
১৭

তোমার ন্যায় মনুষ্যের সাহায্যের অপেক্ষা করেন না। কিন্তু তুমি কাপুরুষ যদি না হও, তবে তুমি কি প্রকারে শত্রুশাসন হইতে অবসৃত হইতে চাও; এই কি তোমার বীরগর্ব্ব? এই কি তোমার শিক্ষা? রাজবংশে জন্মিয়া কি প্রকারে আপন অপহৃত রাজ্যোদ্ধারে বিমুখ হইতে চাহিতেছ?”

 হে। “রাজ্য—শিক্ষা—গর্ব্ব অতল জলে নিমগ্ন হউক।”

 মা। “নরাধম! তোমার জননী কেন তোমাকে দশমাস দশদিন গর্ব্ভে ধারণ করিয়া যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছিল? কেনই বা দ্বাদশবর্ষ দেবারাধনা ত্যাগ করিয়া এ পাষণ্ডকে সর্ব্ববিদ্যা শিখাইলাম?”

 মাধবাচার্য্য অনেক ক্ষণ নীরবে করলগ্নকপোল হইয়া রহিলেন। ক্রমে হেম চন্দ্রের অনিন্দ্য গৌর মুখকান্তি মধ্যাহ্ন-মরীচি-বিশোষিত স্থলপদ্মবৎ আরক্ত বর্ণ হইয়া আসিতেছিল; কিন্তু গর্ভাগ্নি গিরি-শিখর তুল্য, তিনি স্থির ভাবে দাঁড়াইয়া রহিলেন। পরিশেষে মাধবাচার্য্য কহিলেন “হেমচন্দ্র, ধৈর্য্যাবলম্বন কর। মৃণালিনী কোথায় তাহা বলিব—মৃণালিনীর সহিত তোমার বিবাহ দেওয়াইব। কিন্তু এক্ষণে আমার পরামর্শানুবর্ত্তী হও, অগ্রে স্বকার্য্য সাধন কর।”

 হেমচন্দ্র কহিলেন, “মৃণালিনী কোথায় না বলিলে আমি। যবন বধ জন্য লৌহমাত্র স্পর্শ করিব না।”

 মাধবাচার্য কহিলেন, “আর যদি মৃণালিনী মরিয়া থাকে?”

 হেমচন্দের চক্ষু হইতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইল। তিনি কহিলেন “তবে সে আপনারই কাজ।” মাধবাচার্য্য কহিলেন, “আমি স্বীকার করিতেছি আমিই দেবকার্য্যের কণ্টককে, বিনষ্ট করিয়াছি।”

 হেমচন্দ্রের মুখকান্তি বর্ষণোন্মুখ মেঘবৎ বর্ণ প্রাপ্ত হইল।

খ৩