পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
মৃণালিনী।

নাকে মাতৃসম্বোধন করিতেছি—আমি আপনার পুত্র, কোন আশঙ্কা করিবেন না। আমার নাম মাধবাচার্য্য, আমি হেমচন্দ্রের গুরু। কেবল হেমচন্দ্রের গুরু এমত নহি; ভারতবর্ষের রাজগণের মধ্যে অনেকের সহিত আমার সেই সম্বন্ধ। আমি এক্ষণে কোন দৈবকার্য্যে নিযুক্ত আছি তাহাতে হেমচন্দ্র আমার প্রধান সহায়; তুমি তাহার প্রধান বিঘ্ন।” আমি বলিলাম, ‘আমি বিঘ্ন?’ মাধবাচার্য্য কহিলেন, ‘তুমিই বিঘ্ন। যবনদিগের বিজিত করা, হিন্দু রাজ্যের পুনরুদ্ধার করা, সুসাধ্য কর্ম্ম নহে; হেমচন্দ্র ব্যতীত কাহারও সাধ্য নহে; হেমচন্দ্রও অনন্যমনা। না হইলে তৎকর্ত্তৃকও সিদ্ধ হইবে না। যত দিন আপনার সাক্ষাৎ লাভ সুলভ থাকিবে, তত দিন হেমচন্দ্রের আপনি ভিন্ন অন্য ব্রত নাই—সুতরাং যবনধ্বংস কে করে?’ আমি কহিলাম, “বুঝিলাম প্রথমে আমার ধ্বংস ব্যতীত যবনধ্বংস নাই। আপনার শিষ্য কি আপনার দ্বারা অঙ্গুরীয় প্রেরণ করিয়া আমাকে প্রাণত্যাগে অনুরোধ করিয়াছেন?”

 মণি। “এত কথা বৃদ্ধকে বলিলে কি প্রকারে?”

 মৃ। “বিপদ কালে লজ্জা কি? মাধবাচার্য্য আমাকে মুখরা মনে করিলেন, মৃদু হাসিলেন, কহিলেন ‘আমি যে তোমাকে এইরূপ হস্তগত করিব তাহা হেমচন্দ্র জানেন না।”

 “আমি মনে মনে কহিলাম তবে, যাঁহার জন্য এ জীবন রাখিয়াছি, তাঁহার অনুমতি ব্যতীত সে জীবন ত্যাগ করিব না।” মাধবাচার্য্য বলিতে লাগিলেন, “তোমাকে প্রাণত্যাগ করিতে হইবে না—কেবল আপাততঃ হেমচন্দ্রকে ত্যাগ করিতে হইবে। ইহাতে তাঁহার পরম মঙ্গল। যাহাতে তিনি রাজ্যেশ্বর হইয়া তোমাকে রাজমহিষী করিতে পারেন, তাহা কি তোমার কর্ত্তব্য নহে, তোমার প্রণয়মন্ত্রে তিনি কাপুরুষ হইয়া রহিয়াছেন,