পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
মৃণালিনী।

জয়, অশোকতলস্থ হেমচন্দ্রকে দেখাইয়া দিয়া অন্যত্র গমন করিল। হেমচন্দ্র অন্যমনে মৃদু মৃদু গাইতেছিলেন।

“বিকচ নলিনে, যমুনা পুলিনে, বহুত পিয়াসা রে”

 গিরিজায়া পশ্চাৎ হইতে গাইল

“চন্দ্রমাশালিনী, যা মধু যামিনী, না মিটল আশা রে।”

 গিরিজায়াকে দেখিয়া হেমচন্দ্রের মুখ প্রফুল্ল হইল। কহিলেন,

 “কে গিরিজায়া! আশা কি মিট্ল?”

 গি। “কার আশা? আপনার না আমার।”

 হে। “আমার আশা। তাহা হইলেই তোমার মিটিবে।”

 গি। “আপনার আশা কি প্রকারে মিটিবে? লোকে বলে রাজা রাজড়ার আশা কিছুতেই মিটে না।”

 হে। “আমার অতি সামান্য আশা।”

 গি। “যদি কখন মৃণালিনীর সাক্ষাৎ পাই তবে এ কথা তাঁহার নিকট বলিব।”

 হেমচন্দ্র বিষণ্ণ হইলেন। কহিলেন, “তবে কি আজিও মৃণালিনীর সন্ধান পাও নাই? আজি কোন্‌ পাড়ায় গীত গাইতে গিয়াছিলে?”

 গি। “অনেক পাড়ায়—সে পরিচয় আপনার নিকট নিত্য নিত্য কি দিব? অন্য কথা বলুন।”

 হেমচন্দ্র নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “বুঝিলাম বিধাতা বিমুখ। ভাল পুনর্ব্বার কালি সন্ধানে যাইবে।”

 গিরিজায়া তখন প্রণাম করিয়া কপট বিদায়ের উদ্যোগ করিল। গমনকালে হেমচন্দ্র তাহাকে কহিলেন, “ভাল—গিরিজায়া—তোমাকেত আমি তোমার পুরস্কার স্বরূপ বসন ভূষণ দিরাছি—সে গুলিন্‌ পর না কেন?”

 গি। “সুবদনা ভিখারিণীকে কে ভিক্ষা দিবে? আপনি