পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দুতী।
৩৭

যত দিন আছেন, তত দিন যেন আমার ভিক্ষার প্রয়োজন নাই। আপনি যথেষ্ট পুরস্কার করিতেছেন কিন্ত আপনি ত বসন্তের কোকিল। উড়িয়া গেলে আমার যে ভিক্ষা, সেই ভিক্ষা করিতে হইবে। আর আমি আপনার কোন কাজ করিতে পারিলাম না; সে গুলিন আপনার ফিরাইয়া দিব।”

 হেমচন্দ্র কহিলেন, “ফিরাইয়া দিবে কেন? গিরিজায়া, তুমি হাসিতেছ না কিন্ত তোমার চক্ষু হাসিতেছে। আজি কি তোমার গান শুনিয়া কেহ কিছ বলিয়াছে?”

 গি। “কে কি বলিবে? এক মাগী তাড়া করিয়া মারিতে আসিয়াছিল—বলে মথুরাবাসিনীর জন্যে শ্যামসুন্দরের ত মাথাব্যথা পড়িয়াছে।”

 হেমচন্দ্র দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া অস্ফুটস্বরে, যেন আপনা আপনি কহিতে লাগিলেন “এত যত্নেও যদি সন্ধান না পাইলাম, তবে আর বৃথা আশা—কেন মিছা কালক্ষেপ করিয়া আত্মকর্ম্ম নষ্ট করি;—গিরিজায়ে, কালি তোমাদিগের নগর হইতে বিদায় হইব।”

 “তথাস্ত।” বলিয়া গিরিজায়া মৃদু মৃদু গান করিতে লাগিল,—

 “শুনি যাওয়ে চলি, বাজায়ি মুরলী, বনে বনে একা রে।”

 হেমচন্দ্র কহিলেন, “ও গান এই পর্য্যন্ত! অন্য গীত গাও।”

 গিরিজায়া গাইল,

“কটিবাস কসিয়ে, রাস রসে রসিয়ে, মাতিল রস কামিনী।”

 গাইতে গাইতে গিরিজায়া লজ্জিতা হইলেন, তখন গীত পরিবর্ত্তন করিয়া গাইলেন,