পাতা:মৃণালিনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দুতী।
৩৯

 হেমচন্দ্র বাষ্পাকুললোচনে গদ্গদস্বরে গিরিজীয়াকে কহিদেন, “এ আমারি মৃণালিনী। তুমি তাহাকে কোথায় দেখিলে?”

গি।

“দেখিলাম সরোবরে, কাঁপিচে পবন ভরে,
মৃণাল উপরে মৃণালিনী।”

 হে। “এখন রূপক রাখ আমার কথার উত্তর দাও—কোথায় মৃণালিনী?”

 গি। “এই নগরে।”

 হেমচন্দ্র রুষ্টভাবে কইলেন, “তা ত আমি অনেক দিন জানি। এ নগরে কোন্‌ স্থানে?”

 গি। “হৃষীকেশ শর্ম্মার বাড়ী।”

 হে। “কি পাপ! সে কথা আমিই তোমাকে বলিয়া দিয়াছিলাম। এত দিনত তাহার সন্ধান করিতে পার নাই, এক্ষণে কি সন্ধান করিয়াছ?”

 গি। “সন্ধান করিয়াছি।”

 হেমচন্দ্র দুই বিন্দু—দুই বিন্দু মাত্র অশ্রু মোচন করিলেন। পুনরপি কহিলেন “সে এখান হইতে কত দূর?”

 গি। “অনেক দুর।”

 হে। “সে এখান হইতে কোন্‌ দিকে যাইতে হয়?”

 গি। “এখান হইতে দক্ষিণ, তার পর পূর্ব্ব; তার পর উত্তর, তার পর পশ্চিম—”

 হেমচন্দ্র হস্ত মুষ্টিবদ্ধ করিলেন। কহিলেন এ সময়ে ব্যঙ্গ ত্যাগ কর নচেৎ মস্তক চূর্ণ করিব।”

 গি। “শান্ত হউন। পথ বলিয়া দিলে কি আপনি চিনিতে পারিবেন? যদি তা না পারিবেন, তবে জিজ্ঞাসার আবশ্যক? আজ্ঞা করিলে আমি সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইব।”

ঘ২